নারী নির্যাতন মামলা কোথায় করব? কিভাবে করবো, কি কি লাগবে বিস্তারিত জানুন

নারী নির্যাতন মামলা কোথায় করব

যে সকল মা বোনেরা প্রতিনিয়ত শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দ্বারা মানসিক ভাবে কিংবা শারীরিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হন তারা চাইলে নারী নির্যাতন মামলা করে আপনার বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেন। হ্যা, আজকের পোষ্টটি সেই সকল মা বোনদের জন্য যারা অন্যায় ভাবে নির্যাতনের শিকার হন এবং মনে মনে ভাবেন নারী নির্যাতন মামলা করবো। কিন্ত নারী নির্যাতন মামলা কোথায় করবো, কিভাবে করবো, এ সকল বিষয়ে কোন ধারণা নেই। তাই যারা নারী নির্যাতন মামলা করতে চান সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন।

তাহলে নারী নির্যাতন মামলা কোথায় করবেন, কিভাবে করবেন, কি কি কাগজপত্র লাগবে ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে চলুন নারী নির্যাতন মামলা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

Table of Contents

নারী নির্যাতন কি?

আমেদের দেশের অসংখ্য নারী প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়। নারীদের উপর শারীরিক কিংবা মানসিক কিংবা অর্থনৈতিক কিংবা সামাজিক যে কোন প্রকার নিপীড়ন কে নারী নির্যাতন বলে। অন্যভাবে বলতে গেলে নারীরা যখন ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে অন্য কারো দ্বারা  বঞ্চনার শিকার হয় সেই সাথে দৈহিক, যৌ'ন এবং মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় তখন সেই পরিস্থতিকে নারী নির্যাতন বলে। 

নারী নির্যাতন মামলা কোথায় করবো

অনেক নারীরা নির্যাতনে শিকার হওয়ার পর তাদের মনে খেয়াল আসে যে, নারী নির্যাতন মামলা করবো। কিন্ত নারী নির্যাতন মামলা কোথায় করবো, কিভাবে করবো, কি কি কাগজপত্র লাগবে সে সকল বিষয়ে কোন ধারণা না থাকার ফলে মামলা করার চিন্তা অনেকেই পরিত্যাগ করে। তবে যাদের পিট দেয়ালে ঠেকে গেছে তারা নারী নির্যাতন মামলা করতে চাইলে নিম্নোক্ত উপায়ে মালা করতে পারবেন। 

নারী নির্যাতন মামলা সাধারণ দুইভাবে করা যায়। 

  • থানায় নারী নির্যাতন মামলা
  • কোর্টে নারী নির্যাতন মামলা

থানায় এবং কোর্টে গিয়ে কিভাবে নারী নির্যাতন মামলা করতে হবে আমরা সে বিষয়ে জানবো। 

থানায় নারী নির্যাতন মামলা

আপনি যদি নির্যাতনের শিকার হন এবং থানায় গিয়ে নারী নির্যাতন মামলা করতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে সরকারি কোন হাসপাতলে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। সেখান থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিতে হবে। নারী নির্যাতন মামলা করতে কি কি লাগবে সে বিষয়ে একটু পরেই বিস্তারিত জানাবো। 

মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে আপনাকে থানায় যেতে হবে। থানায় কর্মরত ডিউটি অফিসারের সাথে আপনার নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন। তাহলে তিনি আপনার মামলা টি নিয়ে নিতে পারেন। যদি থানা থেকে মামলাটি নিয়ে নেয় তাহলে আসামীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে যাবে এবং খুব দ্রুতই আসামীদের গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।

কোর্টে নারী নির্যাতন মামলা

থানায় যদি আপনার মামলাটি না নেয় তাহলে হতাশ হবেন না। আপনি সরাসরি কোর্টে চলে যাবেন এবং একজন বিজ্ঞ আইনজীবির সাথে আপনার সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবোন। তিনি আপনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আর্জি তৈরী করে আপনার সংশ্লিষ্ট আমলী আদালতে নারী নির্যাতন মামলা ফাইল করবেন। তাহলে কোর্ট থেকে আপনার জবানবন্দী নেবেন। আপনি সঠিকভাবে সবকিছু বলবেন। 

তারপর কোর্ট আসামীদের বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল অথবা থানা অথবা পিবিআই ইনকয়েরি করার আদেশ দিতে পারে। ইনকয়েরি রিপোর্ট বা তদন্ত রিপোর্ট যদি আপনার পক্ষে আসে তাহলে আসামীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে যাবে। কিন্ত যদি তদন্ত রিপোর্ট আপনার বিপক্ষে যায় তাহলে কোর্ট আপনার মামলাটি তখনই শেষ করে দেবেন।

নারী নির্যাতন মামলা করার পর করণীয়

কোর্টে অথবা থানায় নারী নির্যাতন মামলা করার পর কোর্ট বা থানা যদি আপনার মামলটি গ্রহণ করে তাহলে আপনার করণীয় কি? মামলাটি গৃহীত হওয়ার পর অবশ্যই একজন বিজ্ঞ আইনজীবি নিয়োগ করতে হবে যাতে আসামীপক্ষ জামিন না নিতে পারে। আসামী পক্ষ জামিন না নিতে পারলে তখন তারা আপনার সাথে সমঝোথা করার চেষ্টা করতে বা এমন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

অপরদিকে আপনি যদি কোন বিজ্ঞ আইনজীবি নিয়োগ নাও করতে পারেন তাহলে সরকারি উকিল আপনার মামলার দায়িত্ব নেবে। তবে সব থেকে ভালো হয় একজন বিজ্ঞ আইনজীবি নিয়োগ করতে পারলে।

নারী নির্যাতন মামলা করতে কি কি লাগে

আপনি যদি নির্যাতনের শিকার হন এবং নারী নির্যাতন মামলা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়াও আপনি মামলা করতে পারবেন কিন্ত সেই মামলায় খুব বেশি লাভবান হতে পারবেন না। 

কারণ আপনি যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেটা কোর্টে প্রমাণ করতে হবে। তাই অবশ্যই নির্যাতনের যে ছাপ রয়েছে, বা ফুটেজ রয়েছে বা ডকুমেন্টস রয়েছে সেগুলো নিয়ে কোর্টে এসে আইনজীবিকে দেখাতে হবে। তাবেই আপনার মামলাটি শক্ত-পোক্ত হবে এবং ভালো ফলাফল পাবেন।

তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস হচ্ছে মেডিকেল সার্টিফিকেট। আপনি যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে তারপরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তার প্রমাণ হিসেবে সরকারি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন এবং পুলিশ কেস সীলসহ একটি সার্টিফিকেট সরকারি হাসপাতল থেকে সংগ্রহ করতে হবে। 

থানায় নারী নির্যাতন মামলা করার সুবিধা ও অসুবিধা

থানায় নারী নির্যাতন মামলা করার যেমন সুবিধা রয়েছে তেমন কিছু অসুবিধাও রয়েছে। চলুন সেগুলো জানি-

থানা থেকে নারী নির্যাতন মামলা গ্রহণ করলে সাথে সাথে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে যায়। অর্থাৎ আসামীকে দ্রুত এ্যারেষ্ট করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। থানায় মামলা করার সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে এটা।

থানায় নারী নির্যাতন মামলা করার একটি অসুবিধা হচ্ছে আপনি মামলা করতে চাইলেন কিন্ত তারা আপনার মামলাটি নাও নিতে পারে। যদি আপনি আপনার অভিযোগ সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ/দলিলাদি না দেখাতে পারেন তাহলে তারা আপনার মামলা নেবে না। 

থানায় মামলা করার আরো একটি অসুবিধা হচ্ছে, মামলা নেয়ার পর থানা থেকে যখন কোর্টে চার্জশীট দেবে তখন পুলিশ চাইলেই কিন্ত ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দিতে পারে। ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া মানে হচ্ছে মামলাটি শেষ হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ আপনার ঘটনার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি এমন উল্লেখ করে দিলে মামলা শেষ হয়ে যায়।

কোর্টে নারী নির্যাতন মামলা করার সুবিধা ও অসুবিধা

কোর্টে মামলা করলে আসামীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হতে বেশ কিছুটা সময় লাগতে পারে। কারণ কোর্ট মামলা দায়ের করার পর সে বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত রিপোর্ট যদি আপনার পক্ষে থাকে তাহলেই আসামীকে এ্যারেষ্ট করার জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়। এটাই হচ্ছে কোর্টে মামলা করার অসুবিধা। অর্থাৎ এ্যারেষ্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু হতে সময় লাগে।

কোর্টে মামলা করার সুবিধা হচ্ছে মামলাটি আপনার হাতে থাকবে। আইনজীবির মাধ্যমে আপনি নিজের ইচ্ছামত মামলটি পরিচালনা করতে পারবেন। কেউ চাইলেই মামলাটি শেষ করতে পারবেন না। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনারা মামলাটি উইথড্রো করবেন।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় নারী নির্যাতন মামলা থানায় এবং কোর্টে উভয় জায়গায়ই করা যায়। তবে মামলা করতে হলে অবশ্যই শক্ত-পোক্ত ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে। তা না হলে মামলটি থেকে ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব হবে না। আর থানায় মামলা করার ক্ষেত্রে যেমন কিছু সুবিধা  এবং অসুবিধা রয়েছে তেমনি কোর্টে মামলা করার ক্ষেত্রেও কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছ। যেগুলো সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন আপনারা কোথায় মামলা করবেন কোথায় মামলা করলে সুবিধা হয় সেটা আপনাদের বিষয়।

এই ছিলো নারী নির্যাতন মামলা কোথায় করবো প্রশ্নের বিস্তারিত পরামর্শ। আশা করি সকলকে বোঝাতে পেরেছি। এ বিষয়ে যদি আরো ভালো করে জানতে চান তাহলে অবশ্যই কোন বিজ্ঞ আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। লেখাটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ..!

আরো পড়ুন-

কারো নামে মামলা আছে কিনা জানার উপায়

মামলা দেখার উপায় কি জানুন

ফৌজদারি মামলা কি - ফৌজদারি মামলার বিচার পদ্ধতি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন