ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে? সঠিক তথ্য জানুন

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে

যারা সচেতন ব্যক্তি হিসেবে জানতে চান যে, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে? আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে তাদেরকে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য দিতে চলেছি। আশা করি আপনারা সকলে বিস্তারিত জানার জন্য সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন। ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানা থাকলে আপনারই লস হতে পারে। কারণ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য ফি বিভিন্ন রকম রাখা হয়েছে। যেখানে ১১৫ টাকা ফি প্রযোজ্য সেখানে ভুল করে ২৩০ টাকা ফি জমা দিলে আপনারই লস হবে। 

তাই ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে সে বিষয়ে আপনাদের আগে জেনে নেয়া উচিত। আর আজকের এই পোষ্টে সে বিষয়েই বিস্তারিত উল্লেখ করতে চলেছে। সেই সাথে একাধিকবার Nid সংশোধনের আবেদন করলে ফি এর পরিমাণ কত টাকা বেশি জমা দিতে হবে সেটাও উল্লেখ করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে Nid সংশোধন ফি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-

Table of Contents

ভোটার আইডি কার্ড এবং ভোটার তথ্য

ভোটার আইডি কার্ডের উপর এক জন ভোটারের সম্পর্কে সকল তথ্য লেখা না থাকলেও নতুন ভোটার হওয়ার সময় ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ এর উপর নাগরিকের প্রায় ২৫ ধরণের তথ্য লিখতে হয়। এই সকল তথ্যই সংশোধন যোগ্য। আপনার ভোটার তথ্যে যদি কোন ধরণের ভুল থাকে সেটি আপনি সংশোধন করতে পারবেন।

এখন প্রশ্ন আসে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে? এখানে একটু বোঝার বিষয় রয়েছে। ভোটার আইডি কার্ডে  বা ভোটার তথ্যে বিদ্যমান তথ্যগুলোর সংশোধন ফি এক নয়। ভোটার আইডি কার্ডের কোন তথ্য সংশোধন করতে কত টাকা ফি জমা দিতে হয় চলুন জানি-

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে

একজন ভোটারের ভোটার তথ্য দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য এবং  অপরটি হচ্ছে অন্যান্য তথ্য। ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন করতে যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য সেই ফি প্রযোজ্য না। 

ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন করতে ২৩০ টাকা ফি জমা দিতে হয়। অর্থাৎ যে তথ্যগুলো ভোটার আইডি কার্ডের উপর লেখা থাকে সেগুলো সংশোধন করার জন্য ২৩০ টাকা সরকারি ফি প্রযোজ্য।

ব্যক্তিগত তথ্যগুলো হচ্ছে-

  • ভোটারের বাংলা ও ইংরেজি নাম
  • জন্ম তারিখ
  • পিতা ও মাতার নাম
  • জন্মস্থান
  • র'ক্তের গ্রুপ
  • বর্তমান ঠিকানা
  • ছবি পরিবর্তন
  • স্বাক্ষর পরিবর্তন ইত্যাদি।

ভোটার আইডি কার্ডের এই সকল তথ্য সংশোধন করার জন্য অবশ্যই ২৩০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। এই সকল তথ্য সংশোধন করা হলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটারকে নতুন একটি সংশোধিত Nid Card দিয়ে থাকে।

ভোটার আইডি কার্ডের অন্যান্য তথ্য সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ডের অন্যান্য তথ্য সংশোধন করতে ১১৫ টাকা সরকারি ফি জমা দিতে হয়। অর্থাৎ যে তথ্যগুলো ভোটার আইডি কার্ডের উপর লেখা থাকে না সেগুলো সংশোধন করতে চাইলে ১১৫ টাকা সরকারি ফি জমা দিতে হয়।

একজন ভোটারের অন্যান্য তথ্যগুলো হচ্ছে-

  • শিক্ষগত যোগ্যতা সংশোধন
  • স্বামী/স্ত্রীর নাম সংশোধন বা সংযোজন
  • স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি নম্বর সংশোধন বা সংযোজন
  • জন্ম সনদ নম্বর সংশোধন বা সংযোজন
  • পিতা মাতার এনআইডি নম্বর সংশোধন বা সংযোজন
  • পিতা মাতার মৃ'ত্যু সাল সংশোধন বা সংযোজন
  • মোবাইল নম্বর সংশোধন সংযোজন
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর সংশোধন বা সংযোজন
  • টিন নম্বর সংশোধন বা সংযোজন
  • পাসপোর্ট নম্বর সংশোধন বা সংযোজন
  • লিঙ্গ পরিবর্তন
  • ধর্ম সংশোধন
  • পেশা পরিবর্তন
  • সনাক্তকরণ চিহ্ন সংশোধন বা সংযোজন
  • অসমর্থতা তথ্য সংশোধন ইত্যাদি।

আপনার ভোটার তথ্য থেকে উপরোক্ত তথ্যগুলোর এক বা একাধিক তথ্য সংশোধন করার জন্য ১১৫ টাকা সরকারি ফি জমা দিতে হয়। এই তথ্যগুলো সংশোধন করার পর নতুন করে কোন Nid Card দেয়া হয় না।

ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য ও অন্যান্য তথ্য সংশোধন

আপনার ভোটার আইডি কার্ডে যদি ব্যক্তিগত তথ্য এবং অন্যান্য তথ্য উভয় তথ্যের মধ্যে ভুল থাকে এবং সেগুলো সংশোধনের জন্য আবেদন করেন তাহলে ৩৪৫ টাকা সরকারি ফি জমা দিতে হবে। আপনি একটি আবেদনের মধ্যেই সবগুলো ভুল উল্লেখ করে আবেদন করতে পারবেন। আলাদা করে আবেদন করা লাগবে না।

আবার শুধু ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা সংশোধনের জন্য আবেদন করলেও ৩৪৫ টাকা ফি জমা দিতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা সংশোধনের আবেদনটি ব্যক্তিগত তথ্য ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের আওতায় পড়ে।

একাধিকবার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন করলে

আপনি উপযুক্ত কাগজপত্র জমা দিয়ে একাধিকবার সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন। তবে একাধিকবার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য আবেদন করলে ফি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে

যদি ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন করার জন্য দ্বিতীয়বার আবেদন করেন তাহলে ফি ২৩০ টাকার পরিবর্তে ৩৪৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

আবার যদি তৃতীয়বার সংশোধনের জন্য আবেদন করেন তাহলে ফি ৩৪৫ টাকার পরিবর্তে ৪৬০ টাকা জমা দিতে হবে। 

ভোটার আইডি কার্ডের অন্যান্য তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে

যদি ভোটার আইডি কার্ডের অন্যান্য তথ্য সংশোধন করার জন্য দ্বিতীয়বার আবেদন করেন তাহলে ফি ১১৫ টাকার পরিবর্তে ২৩০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

আবার যদি তৃতীয়বার সংশোধনের জন্য আবেদন করেন তাহলে ফি ২৩০ টাকার পরিবর্তে ৩৪৫ টাকা ফি জমা দিতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে

যদি ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য এবং অন্যান্য তথ্য একসাথে সংশোধন করার জন্য দ্বিতীয়বার আবেদন করেন তাহলে ফি ৩৪৫ টাকার পরিবর্তে ৪৬০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

আবার যদি তৃতীয়বার সংশোধনের জন্য আবেদন করেন তাহলে ফি ৪৬০ টাকার পরিবর্তে ৫৭৫ টাকা ফি জমা দিতে হবে।

তাহলে বুঝতেই পারছেন ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে? ভোটার আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন এবং অন্যান্য তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে ফি আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। 

তাছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য ও অন্যান্য তথ্য একসাথে সংশোধন করতে গেলেও ফি আলাদা হয়ে থাকে। আবার একাধিকবার ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য এবং ব্যক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রেও ফি আলাদা হয়ে থাকে। 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে

যারা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি নিজের বিকাশ একাউন্ট কিংবা রকেট একাউন্ট থেকে পরিশোধ করে থাকে তারা বেঁচে যায়। কিন্ত অধিকাংশ মানুষ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা দেয়ার জন্য বিভিন্ন দোকান/ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে থাকে। তারা Nid সংশোধন ফি এর বিষয়ে সঠিক তথ্য না জানার কারণে তাদের থেকে বেশি টাকা নিয়ে থাকে। 

যেমন ধরুন কোন ব্যক্তি ভোটার আইডি কার্ডের অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য ফি জমা দেবে কিন্ত তার কাছ থেকে ২৩০ টাকা নিয়েছে এবং পরিশোধ করেছে ১১৫ টাকা। মাঝখানে দোকানদার ১১৫ টাকা অতিরিক্তি লাভ করে নিলো। কারণ আমরা সকলে একটা প্রচলিত তথ্য জানি যে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে ২৩০ টাকা লাগে!

তাই যেহেতু ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি ব্যক্তিগত তথ্য ও অন্যান্য তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে আলাদা। সেহেতু আপনারা ফি জমা দেয়ার সময় বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন। তা না হলে আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় যে, ভোটার আইডি কার্ডের সকল তথ্য সংশোধনের জন্য ফি এক নয়। কিছু কিছু তথ্য সংশোধনের জন্য ফি ২৩০ টাকা জমা দিতে হয় আবার কিছু কিছু তথ্য সংশোধনের জন্য ১১৫ টাকা জমা দিতে হয়। তাই বিষয়টি জানা থাকলে আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারেন।

এই ছিলো ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে সে বিষয়ে বিস্তারিত এবং সঠিক তথ্য। আশা করি আপনারা সকলে বুঝতে পেরেছেন। এ বিষয়ে যদি আরো তথ্য জানতে চান তাহলে কমেন্টস করবেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করবো। এ বিষয়ে অন্যদেরকে অবগত করার জন্য লেখাটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন