মামলা স্থগিত করার নিয়ম কি জানুন

মামলা স্থগিত করার নিয়ম

আপনি নির্দোষ ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও কোন না কোন কারন বসত নিম্ন আদালতে আপনার নামে মিথ্যা মামলা বা ভিত্তিহীন মামলা হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় আপনি কি করবেন? আপনি চাইলে আপনার নামে মিথ্যা মামলা বা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে হওয়া মামলাটি উচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্থগিত করতে পারেন। আজকে মামলা স্থগিত করার নিয়ম কি সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করার চেষ্টা করবো।

নির্দোষ ব্যক্তির নামে হওয়া মিথ্যা মামলা বা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে মামলা হলেই যে আপনাকে সেই মামলার ঘানি টানতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি যদি একটু সচেতন হন তাহলে একজন বিজ্ঞ আইনজীবির মাধ্যমে সেই মামলা স্থগিত করতে পারেন।

Table of Contents

মামলা স্থগিত কি?

মামলা স্থগিত করা বলতে বোঝায় আপনার নামে দায়ের হওয়া মামলাটি চলতে না দিয়ে আইনের মাধ্যমে সেটিকে থামিয়ে রাখা। তবে মামলা স্থগিত করার বিষয়টি আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। মামলা চলমান অবস্থায় যদি আদালত মনে করে যে মামলাটি আইন দ্বারা বারিত অথবা অন্য কোন কারনে এটি আর চলতে পারে না, অর্থাৎ মামলাটি চলার কোন আইনগত ভিত্তি নেই তবেই আদালত মামলা স্থগিত করতে পারে। 

মামলা স্থগিত করার নিয়ম

আপনি দুইটি উপায়ে মামলা স্থগিত করার জন্য চেষ্টা করতে পারবেন। প্রথমটি হচ্ছে নিম্ন আদালত যেমন- ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট অথবা জজ কোর্ট যে কোর্টেই মামলা হোক না কেন সেই আদালতে ডিসচার্জ পিটিশন বা অব্যাহতির পিটিশন দিতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে উচ্চ আদালতে অর্থাৎ মহামান্য হাইকোর্টে ৫৬১ (এ) ধারায় মামলা স্টে পিটিশন করতে হবে।

নিম্ন আদালতে মামলা স্থগিত করার নিয়ম

যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়েন এবং নিম্ন আদালত যেমন- জজ কোর্ট অথবা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের হয় তাহলে একজন বিজ্ঞ আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। 

মামলার শুনানির দিনে আইনজীবির মাধ্যমে ডিসচার্জ পিটিশন বা অব্যাহতির পিটিশন দিতে হবে। যদি আদালত আপনার অব্যাহতি দিয়ে দেয় তাহলে তো মামলা স্থগিত হয়েই গেলো। আর যদি সেখান থেকে মামলা ডিসচার্জ না করে তাহলে মামলা চলমান থাকবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে মহামান্য উচ্চ আদালতে যেতে হবে মামলা স্থগিত করার জন্য।

উচ্চ আদালতে মামলা স্থগিত করার নিয়ম

যদি আপনার মনে আত্মবিশ্বাস থাকে যে, আপনি প্রকৃত দোষী না, নির্দোষ ব্যক্তি। কিন্ত আপনাকে দোষী বানানোর চেষ্টা করছে কিছু কতিপয় ব্যক্তি বা দুষ্কৃতিকারীরা। ফলে আপনাকে ভিকটিম করে নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করেছে এবং শুনানির দিনে আপনার অব্যাহতির পিটিশন না মঞ্জুর হয়েছে। 

সেক্ষেত্রে আপনাকে ৫৬১ (এ) ধারায় মহামান্য উচ্চ আদালতে যেতে হবে। এখন বিষয় হচ্ছে উচ্চ আদালতে যাওয়ার নিয়ম টা কি? নিময় হচ্ছে আপনার মামলার যত প্রকার কাগজপত্র রয়েছে সেগুলোর সার্টিফাইড কপি তুলতে হবে। তারপর উচ্চ আদালতের যে কোন এটি কোর্টে স্টে পিটিশন দায়ের করতে পারবেন মামলাটি স্থগিত করার জন্য।

তারপর মহামান্য হাইকোর্টে প্রাকটিস করেন এমন একজন বিজ্ঞ আইনজীবি নিয়োগ দিয়ে মামলার যাবতীয় কাগজপত্র তাকে দেখাবেন এবং আপনার মামলা সম্পর্কে তাকে বিস্তারিত বলবেন।

হাইকোর্টে স্টে পিটিশন দায়ের করার পর শুনানির একটি তারিখ পড়বে। শুনানির তারিখে আপনার আইনজীবি মামলার কাগজপত্রের আলোকে বিভিন্ন ল পয়েন্টগুলো মহামান্য বিচারপতির সামনে তুলে ধরতে পারেন এবং আইনজীবির বক্তব্য বিচারপতির নিকট সন্তোষজনক মনে হয় তাহলে আপনার মামলাটি স্থগিত করে দেবেন।

মামলাটি ৩ মাসের জন্য কিংবা সর্বোচ্চ ৬ মাসের জন্য স্টে বা স্থগিত হতে পরে। তারপর যে নিম্ন আদালতে আপনার মামলা চলমান রয়েছে সেই আদালতে হাইকোর্টের স্টে অর্ডারটি চলে আসবে এবং আপনার মামলা স্থগিত হয়ে যাবে। 

মামলা স্থগিত হলে আপনাকে কোর্ট হাজিরা দেয়ার দরকার হবে না। অর্থাৎ মামলা অব্যাহতি আদেশে যে সময় উল্লেখ থাকবে সেই সময়ের মধ্যে আপনার আর মামলার ঝামেলা পোহাতে হবে না। মামলার স্থগিত আদেশের সময় শেষ হওয়ার পূর্বে পুনরায় হাইকোর্ট থেকে সময় এক্সটেনশন করে নিতে হবে।

সে ক্ষেত্রে ৩ মাস, ৬ মাস অথবা ১ বছরও সময় বাড়িয়ে দিতে পারে। এভাবে প্রতিবারই সময় শেষ হওয়ার পূর্বে স্টে অর্ডারের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে হাইকোর্টের বিচারপতিরা যদি মনে করেন এই মামলাটি আর চলার মত না। 

তাহলে একটা রোল শুনানির মাধ্যমে মামলাটি শেষ করে দেবেন এবং তার আদেশটি নিম্ন আদালতে প্রেরণ করে দেবেন। ওই আদেশের ফলে মামলাটি শেষ হয়ে যাবে।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় যে, মামলা স্থগিত করার জন্য নিম্ন আদালতে শুনানির দিনে ডিসচার্জ পিটিশন দিতে হয়। যদি ডিসচার্জ পিটিশন অনুমোদন হয় তাহলে তো মামলা স্থগিত হয়েই গেলো। আর যদি অব্যাহতি পিটিশন অনুমোদন না হয় তাহলে মহামান্য হাইকোর্টে গিয়ে ৫৬১ (এ) ধারায় স্টে পিটিশন দায়ের করতে হবে। একজন আইনজীবির মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি স্থগিত করার যোগ্য। তাহলে সেখান থেকে মামলাটি স্থগিত করার ্আদেশ নিম্ন আদালতে চলে আসবে। 

এই ছিলো মামলা স্থগিত করার নিয়মের বিষয়ে প্রথমিক ধারণা। এ বিষয়ে যদি আপনার আরো তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই কোন বিজ্ঞ আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করবেন। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন এবং সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন