চেক মামলা থেকে বাচার উপায় কি জানুন

চেক মামলা থেকে বাচার উপায়

বর্তমানে বহু মানুষ চেক মামলার ভুক্তভোগী। চেক মামলা হওয়ার পর রায় যদি বাদীর পক্ষে হয় তাহলে কঠিন সাজা হতে পারে। যদি চেক ডিজঅনার মামলা হয়েই যায় তাহলে ধরে নিতে পারেন রায় বাদীর পক্ষেই যাবে। তবে বর্তমানে চেক ডিজঅনার মামলার নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। সেখানে বাদীকে প্রমাণ করতে হয় তিনি প্রকৃতই টাকা পাবেন কি না এবং টাকা লেনদেনের সময় কোন বৈধ চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়েছিলো কি না ইত্যাদি। 

আজকে আপনাদের মাঝে চেক মামলা থেকে বাচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে থাকুন তাহলে জানতে পারবেন কি কারণে চেক মামলা হতে পারে, চেক মামলা হলে কি করবেন, কিভাবে জামিন নিতে হবে, আপিল কোথায় করবেন, চেক মামলা যাতে না হয় তার জন্য করণীয় কি ইত্যাদি। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক-

Table of Contents

চেক মামলা কেন হয়?

কোন ব্যক্তিকে টাকা প্রদানের জন্য চেক ইস্যু করলে এবং চেকে উল্লেখিত টাকার পরিমাণের চেয়ে আপনার ব্যাংক একাউন্টে কম টাকা থাকলে সেই চেক ব্যাংকে জমা দিলে অনুমোদন হয় না। ব্যাংক সেই চেকটি অপরিশোধিত অবস্থায় চেক গ্রহীতাকে ফেরত প্রদান করে। অর্থাৎ চেকের অসম্মান হয় বা চেকটি ডিজঅনার হয়।

চেক দাতা যাকে চেক প্রদান করবেন তিনি চেকটি ব্যাংকে জমা দেয়ার পর যদি তার প্রাপ্য টাকা না পান তাহলে তিনি চেক দাতার বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাতে পারেন। উকিল নোটিশ বা লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেক গ্রহীতার পাওনা টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে। 

যদি ৩০ দিনের মধ্যে তার পাওনা টাকা পরিশোধ না করা হয় তাহলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে চেক গ্রহীতা চেক দাতার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারেন। অর্থাৎ কাউকে টাকা পরিশোধ করার জন্য চেক দেয়ার পর যদি সেই চেকটি ব্যাংক থেকে ফেরত দেয় তাহলে চেকটি ডিজঅনার হয়। আর চেক ডিজঅনার হলেই মামলার পরিস্থিত উদ্ভব হয়।


চেক মামলা হলে কি করবেন?

যদি চেক মামলা হয়েই থাকে তাহলে প্রথমে আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে হবে। তারপর বাদী ও আসামীর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু মিটমাট করে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। অথবা চেকে উল্লেখিত টাকার সমপরিমাণ টাকা আদালতে বিচারকের সম্মুখে আসামী কর্তৃক বাদীকে প্রদান করতে হবে। 

চেকের মিথ্যা মামলা হলে কি করবেন?

আপনার নামে যদি চেকের মিথ্য মামলা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ভালো কোন আইনজীবির সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে তার সেবা নিতে পারেন। বর্তমানে চেক মামলার নিময় কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। 

এখন বাদীকে প্রমাণ করতে হয় যে প্রকৃতপক্ষেই তিনি আপনার কাছে টাকা পাবেন। আপনাদের মধ্যে যে লেনদেন হয়েছিলো তার প্রমাণ যদি বাদী করতে না পারেন তাহলে আপনি চেক মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন।

চেক মামলার জামিন কিভাবে নিতে হয়?

চেক মামলা রজু হওয়ার পর আদালত নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে আপনাকে সমন নোটিশ পাঠাবে। সমন নোটিশ পাওয়ার পর বিচলিত না হয়ে বিজ্ঞ কোন আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করবেন। তরপর উক্তি নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে হবে।

চেকের মামলা আপিল করার নিয়ম কি?

পূর্বে চেক মামলার রায় প্রকাশ হওয়ার পর যদি আসামী পক্ষ আপিল করতে চাইতো তাহলে সেটি হাইকোর্টে গিয়ে করতে হতো। কিন্ত বর্তমানে নিয়মটি পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে চেক মামলার কার্যক্রম যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে হয়ে থেকে। মামলার শুনানী এবং রায় এই আদালত থেকেই হয়ে থাকে।

যুগ্ম দায়রা জজ আদালত থেকে একবার রায় বা ডিগ্রি প্রদান করা হয়ে গেলে চেকে উল্লেখিত টাকার অর্ধেক টাকা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে জমা করে দায়রা জজ আদালতে আপিল করতে হয়।

চেকের মামলার সাজা কি?

চেক ডিজঅনার মামলায় বাদী, বিবাদী উভয়ের মনেই এ প্রশ্ন আসতে পারে যে, দো'ষী সাব্যস্ত হওয়ার পর  কি সাজা হবে? এন আই এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারায় চেক ডিজঅনার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ১ বৎসর মেয়াদ পর্যন্ত কারা'দন্ডে দন্ডি'ত হতে পারে অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুণ পরিমাণ অর্থ দ'ন্ডে দন্ডি'ত হতে পারে অথবা উভয় দ'ন্ডে দন্ডি'ত হবে।

চেক মামলা যাতে না হয় সে জন্য কি করা উচিত

ভবিষ্যতে যাতে চেক মামলা না হয় সে জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বর করা ছাড়া তেমন কিছুই করা নেই। তবে সতকর্তা অবলম্বন করলে চেক মামলা হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। যেমন- 

  • ব্যাংক একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকলে কেউকে চেক ইস্যু করা যাবে না। 
  • কারো সাথে লেনদেন করার পূর্বে অবশ্যই বৈধ কোন চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে হবে। 
  • ব্যাংকে টাকা না থাকার পরেও যদি চেক ইস্যু করার প্রয়োজন হয় তাহলে চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে নির্দিষ্ট তারিখ আসার আগে চেক ব্যাংকে জমা করা যাবে না এবং সেই তারিখের পূর্বে একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হবে। 
  • আপনার চেক ডিজঅনার হলে উকিল নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্য চেক গ্রহীতাকে চেকে উল্লেখিত টাকা পরিশোধ করতে হবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকলে চেক মামলা হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। তাই ছোট বড় কোন প্রকার লেনদেন করার আগে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। 

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় চেক ডিজঅনার বা চেকের অসম্মান করা একটি অপরাধ। কাউকে চেক প্রদান করলে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চেকটি ডিজঅনার না হয়। চেক মামলা থেকে বাচার জন্য লেনদেন করার সময় বৈধ চুক্তিপত্র সম্পাদন করে রাখা উচিত। তাছাড়া চেক মামলা হয়ে গেলে উকিল নিটিশ পাওয়র ৩০ দিনের মধ্যেই চেকে উল্লেখিত টাকার সমপরিমান টাকা চেক গ্রহীতাকে পরিশোধ করে দিতে হবে।

এই ছিলো চেক মামলা থেকে বাচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। এ বিষয়ে যদি আরো তথ্য জানার প্রয়োজন হয় তাহলে নিকটস্থ কোন বিজ্ঞ আইনজীবির সহায়তা নিতে পারেন। লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো এবং লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন