জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার সঠিক নিয়ম কি জানুন

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন

বর্তমান সময়ে জাতীয় পরিচয় পত্র এমন একটি ডকুমেন্ট হয়ে দাড়িয়েছে যাকে ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন কল্পনা করা যায় না। কিন্ত দুভাগ্যবসত অনেকের জাতীয় পরিচয় পত্রে নানা ধরণের ভুল রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে হয়। তবে আবেদন করলেই যে সংশোধন হয়ে  যায় সেটিও ঠিক নয়। জাতীয় পরিচয় পত্র বা আইডি কার্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে মানুষের ভোগান্তি'র কোন শেষ নেই। এই ভোগান্তি'র পেছেনে বিশেষ কারণ হচ্ছে সঠিক নিয়মে সংশোধনের আবেদন না করা। কিংবা অযৌতিক পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করা। 

তাই আজকে আপনাদের মাঝে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে চলে আসলাম। আশা করি সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন। তাহলে জানতে পারবেন কি কি উপায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করা যায়। সেই সাথে জানতে পারবেন আবেদন করার পূর্বে এবং পরে কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক-

Table of Contents

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ডে ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের একটা সমস্যা হচ্ছে সঠিক তথ্য না জেনেই সংশোধনের আবেদন করে ফেলে। কিংবা পরামর্শ নিলেও এমন কিছু মানুষের থেকে পরামর্শ নেয় যারা নিজেরাই জানে না জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের সঠিক নিয়ম কি। অথচ তারা অন্যকে পরামর্শ দিতে সর্বদা তৎপড় থাকে।

তাই আপনাদেরকে অনুরোধ করে বলবো, যদি আপনার আইডি কার্ড ভুল থাকে তাহলে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সব থেকে ভালো হয় অফিসের স্টাফদের কাছ থেকে পরামর্শ নিলে। 

এখন বলতে পারেন তাহলে আপনি কেন পরামর্শ দিতে এসেছেন? আমি পরামর্শ দিতে এসেছি এই কারণেই যে, আমি Nid Card এর বিষয়ে অফিসের স্টাফদের থেকে কোন অংশে কম জানি না। আমি আমার পরিচয় এখানে দিতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারি Nid Card সংক্রান্ত এমন কোন বিষয় নেই যে বিষয়ে আমি জানি না। যদি বিশ্বাস না হয় আমাদের সাথে যোগাযোগ করে আমাকে যাচাই করতে পারেন।

যাইহোক, আমি এখানে যে পরামর্শ দেবো আর অফিস থেকে যে পরামর্শ দেবে সেগুলো হুবহু একই হবে। সেই বিশ্বাস রাখুন এবং Nid Card এ ভুল থাকলে আমার দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারেন। এতে আপনার উপকারই হবে। তাহলে চলুন এখন জানি কি কি উপায়ে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করা যায়।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের উপায়

দুইটি উপায়ে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করা যায়। প্রথম উপায় হচ্ছে অফিসে গিয়ে সংশোধনের আবেদন করতে হবে। আর দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করা যায়। এই দুইটি উপায়ের মধ্যে কোন উপায়টি সুবিধাজনক? চলুন জেনে নেয়া যাক।

অফিসে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন

যদি সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে Nid Card বা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে নিম্নোক্ত কাজগুলো আপনাকে করতে হবে।

❖ অফিস থেকে সংশোধনী ফরম ২ সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। 

❖ অবশ্যই আবেদনকারীকে স্বঃ শরীরে অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে। আবেদনকারী উপস্থিত না থাকলে আবেদন জমা নাও নিতে পারে।

❖ কোন দোকান/প্রতিষ্ঠান কিংবা নিজের বিকাশ/রকেট অ্যাপের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি পরিশোধ করে তার রশিদ সংগ্রহে রাখতে হবে। 

❖ আবেদনের সাথে যে সকল কাগজপত্র জমা দেবেন সেগুলো ফটো কপি সঙ্গে রাখতে হবে।

❖ প্রয়োজনে কাগজপত্রগুলো সত্যায়িত করা লাগতে পারে।

❖ যদি কোন কাগজপত্র কমতি থাকে তাহলে সেদিনের মতো বাড়ি ফিরে আসতে হবে এবং পরবর্তীতে আবার অফিসে যেতে হবে ইত্যাদি।

অফিসে Nid Card Correction এর আবেদন করার ক্ষেত্রে এই কমন বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। আবেদন অফিসে জমা হলে আপনাকে একটি প্রাপ্তি স্লিপ দেয়া হবে সেটি নিয়ে বাসায় ফিরে আসবেন। পরবর্তীতে অফিস থেকে আপনার আবেদনের উপর যে কার্যক্রমই গ্রহণ করা হোক না কেন আপনার মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।

অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের দুইটি উপায়ের মধ্যে এই উপায়টি সব থেকে সহজ এবং ঝামেলা মুক্ত উপায়। Nid Application System এর ঠিকানা হচ্ছে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub আপনি এই ঠিকানায় ভিজিট করার পর রেজিস্ট্রেশন করবেন। 

তাহলে আপনার Nid Account তৈরী হয়ে যাবে। তারপর ইচ্ছা মত সময়ে মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে সংশোধনের আবেদন করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। 

❖ কোন ফরম পূরণ করার ঝামেলা নেই। শুধু ভুল তথ্য এডিট করে সঠিকভাবে লিখে দিলেই হয়।

❖ নিজের বিকাশ একাউন্ট অথবা রকেট একাউন্ট ব্যবহার করে ফি পরিশোধ করা যায়।

❖ ফি প্রদানের রশিদ হিসেবে ফি পরিশোধের Receipt টি আপলোড করে দিলেই হয়।

❖ আবেদনের সাথে যে সকল কাগজপত জমা দেয়া লাগবে সেগুলো ছবি তুলে সরাসরি আপলোড করা যায়।

❖ কোন কাগজপত্র সত্যায়িত করার ঝামেলা নেই।

❖ আবেদন শেষে সংশোধনী ফরম ২ ডাউনলোড করা যায়। 

এতটাই সহজ হচ্ছে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করা। আনলাইনে আবেদন সাবমিট করার সাথে সাথে আবেদনের কার্যক্রম শুরু হয়। Nid সংশোধনের বর্তমান অবস্থা মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। 

এতক্ষণে জানলেন জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন এখন জেনে নেয়া যাক জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার সঠিক নিয়ম কি সেই বিষয়ে। 

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার সঠিক নিয়ম

এর আগেই বলেছি আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন করলেই যে সংশোধন হয়ে যায় সেটি ঠিক নয়। সংশোধন না হলে কিংবা সংশোধন হতে দেরি হলেই ভোগান্তি অনুভব হতে থাকে। তাই আগে জানতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র কিভাবে সংশোধন হয়, কিসের ভিত্তিতে সংশোধন হয়। এই একটি বিষয় বুঝতে পারলে ৯৫% ভোগান্তি দূর হয়। 

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হয় কিভাবে

এক কথায় বলতে গেলে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন হয় কাগজপত্রের ভিত্তিতে। সংশোধনের আবেদন করার পূর্বে এই বিষয়টি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। উপযুক্ত কাগজপত্র আবেদনের সাথে জমা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, আপনার চাহিত তথ্য সঠিক এবং আইডি কার্ডে যে তথ্য রয়েছে সেটি ভুল। তাহলেই দ্রুত সংশোধন হবে।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের সব থেকে বড় হাতি'য়ার হচ্ছে এসএসসি সার্টিফিকেট। বাকী যে সকল কাগজপত্র লাগে সেগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। তবে সংশোধনের ক্ষেত্রে এসএসসি সনদের গুরুত্ব অনেক। ধরুন, একজনের নাম আইডি কার্ডে রয়েছে মোঃ আবুল হোসেন। কিন্ত মুলত তার নাম হবে মোঃ আবুল কালাম।

তিনি আবেদন করেছেন এবং আবেদনের সাথে জন্ম সনদ, সন্তানদের জন্ম সনদ, চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন, নাগরিক সনদ ইত্যাদি জমা দিয়েছেন। আপনাদের কি মনে হয় সংশোধন হবে? শুধুই ভোগান্তি হবে আর কিছু না। 

ওই ব্যক্তির উচিত ছিলো উক্ত কাগজপত্রের সাথে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জমা দেয়া। যদি তার কোন শিক্ষা সনদ না থাকে তাহলে অন্ততপক্ষে বৈবাহিক সনদ/কাবিননামা, স্ত্রীর আইডি কার্ডের কপি, ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে), পাসপোর্ট (যদি থাকে), নিজ নামীয় বিদ্যুৎ বিলের কপি (যদি থাকে) ইত্যাদি। 

এই সকল কাগজপত্র তার চাহিত নামের স্বপক্ষে প্রমাণক হিসেবে কাজ করতো এবং তার আবেদন অনুমোদন হতো। এখন যদি তার ্এ সকল কাগজপত্র কিছুই না থাকে তাহলে তিনি তার চাহিত তথ্য প্রমাণ করাতে ব্যর্থ হলেন। তার আবেদন অনুমোদন হবে না এটাই তো স্বাভাবিক।

অর্থাৎ, এখানে জানার বিষয় এটাই যে, জাতীয় পরিচয়পত্রে যে ভুলই থাক না কেন সংশোধনের আবেদন করার আগে জেনে নিতে হবে কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী আবেদনের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাপোর্টিং ডকুমেন্টস দিতে হবে। যাতে প্রমাণ হয় আপনার চাহিত তথ্যই সঠিক, কার্ডে যা আছে সেটা ভুল। অন্যথা ভোগান্তি হতেই পারে। 

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করার পর

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করার পর কিছু বিষয় রয়েছে সেগুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি আবেদন করার ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মোবাইলে কোন ম্যাসেজ না আসে তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে আবেদনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। জিজ্ঞাসা করতে হবে আবেদন কোন ক্যাটাগরীতে রয়েছে। "ক" ক্যাটাগরী, "খ" ক্যাটাগরী, "গ" ক্যাটাগরী না কি "ঘ" ক্যাটাগরী।

  • "ক" ক্যাটাগরীর আবেদন উপজেলা থেকে অনুমোদন বা বাতিল হয়।
  • "খ" ক্যাটাগরীর আবেদনের দায়িত্বে থাকেন জেলা নির্বাচন অফিসার।
  • "গ" ক্যাটাগরীর আবেদনের দায়িত্বে থাকেন বিভাগীয়/আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার এবং
  • "ঘ" ক্যাটাগরীর আবেদন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, ঢাকা থেকে নিষ্পত্তি হয়।

এখন আপনার আবেদন কোন ক্যাটাগরীতে রয়েছে উপজেলা অফিসে থেকে খোজ নিতে হবে। যে ক্যাটাগরীতে, যে স্যারের আন্ডারে রয়েছে সেখানে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে এবং দ্রুত নিষ্পত্তিকরণের জন্য অনুরোধ করতে হবে। যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার আরো কাগজপত্র চায় তাহলে সেগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথা বহুদিন যাবত আবেদন পেন্ডিং অবস্থায় থাকতে পারে অথবা বাতিল হতে পারে। 

পরিশেষে

পরিশেষে এটাই বলবো যে, জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করার প্রয়োজন হলে আগে জেনে নিতে হবে হবে কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবে। সেই অনুযায়ী কাগজপত্র সংগ্রহ করে তারপর আবেদন করতে হবে। মনে রাখবেন জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের এক একটা আবেদন হলো এক একটা কেস। কেসে যদি জিততে চান তাহলে প্রমাণ করতে হয় আপনি নির্দোষ। তাহলেই মুক্তি পাবেন, অন্যথা কেসে হেরে গিয়ে সাজা কাটবেন। 

অনুরুপভাবে আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদনকে এক একটি কেস মনে করে কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে আপনার চাহিত তথ্য সঠিক। আইডি কার্ডে যে তথ্য লেখা আছে সেটি ভুল। তাহলেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হবে। 

আশা করি বিস্তারিত বোঝাতে পেরেছি। এ বিষয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্স করবেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করবো। লেখাটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন