পুরাতন দলিল তল্লাশি করার সঠিক উপায় কি জানুন

পুরাতন দলিল তল্লাশি

জমির মালিকানার খুব গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস হচ্ছে দলিল। অনেকেই তার জমির এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি হারিয়ে ফেলে অথবা কোন না কোন কারণে দলিলটি নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে দলিলের নম্বর, বালাম নম্বর, পৃষ্ঠা নম্বর, তারিখ কোন কিছুই তাদের জানা থাকে না। তাহলে কিভাবে তল্লাশি দিয়ে জমির এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি বের করবেন? আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেকে জমির পুরাতন দলিল তল্লাশি করার সঠিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো। 

সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে থাকুন তাহলে জমির পুরাতন দলিল তল্লাশি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক-

Table of Contents

দলিল কি?

জমির দলিল তল্লাশি করার বিষয় সম্পর্কে জানার আগে আমরা দলিল সম্পর্কে একটু জেনে নেই। দলিল হচ্ছে সম্পত্তির মালিকানার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস। দলিলের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে সম্পত্তির মালিক আপনি। কোন স্থাবর সম্পত্তি হস্থান্তর করতে চাইলে সেটি অবশ্যই এই দলিলের মাধ্যমে করতে হয়। এই দলিল আমাদের দেশে প্রচলিত যে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন আইন রয়েছে সেই আইন অনুযায়ী অবশ্য্‌ই নিবন্ধন করে নিতে হয়।

দলিল অনেক প্রকার হয়ে থাকে যেমন, সাব-কবলা দলিল, বিনিয়ম দলিল, এওয়াজ বদল দলিল, হেবা দলিল, দান দলিল ইত্যাদি। যখন কোন দলিল রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি হওয়ার পর যখন অনুমোদিত হয়। তখন দলিলটি বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া দলিলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সূচিপত্র তৈরী করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে এই বালাম ও সূচিপত্র তৈরী করার কাজ শেষ হলে দলিলের শেষ পৃষ্ঠার পিছনের পাতায় দলিলটি কত সালের, দলিলের নম্বর কত, কত নম্বর বালামে দলিলটি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, কত পৃষ্ঠা থেকে কত পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ইত্যাদি সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর করে দাতাকে দেয়া হয়ে থাকে।

আপনার জমির এই গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি আপনি হারিয়ে ফেলেছেন অথবা নষ্ট হয়ে গেছে। দলিলের এই সকল তথ্য অর্থাৎ দলিলের তারিখ, দলিল নম্বর, বালাম নম্বর, পৃষ্ঠা নম্বর ইত্যাদি তথ্য যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে খুব সহজেই নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে দলিলের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। 

পুরাতন দলিল তল্লাশি করার উপায়

আপনার জমির গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি হারিয়ে গেছে কিংবা কোন কারণ বসত নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্ত দলিলের কোন নম্বর, বালাম নম্বর, দলিলের তারিখ, পৃষ্ঠা নম্বর কোন তথ্যই আপনার জানা নেই। সে ক্ষেত্রে এই দলিলটি যদি আপনি তল্লাশি দিয়ে বের করতে চান তাহলে সেটি কোথায় তল্লাশি দেবেন এবং কিভাবে তল্লাশি দেবেন? চলুন এ বিষয়ে জেনে নেয়া যাক-

সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল তল্লাশি

জমির হারনো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া পুরাতন দলিলটি তল্লাশি দিতে হলে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তল্লাশি দিতে হবে। কারণ যখন কোন দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার পর যখন অনুমোদিত হয় তখন দলিলটি বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়াও দলিলটির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সূচিপত্র তৈরী করা হয়। একটি দলিলের দুইটি সূচিতপত্র তৈরী করা হয়ে থাকে। 

একটি সূচিপত্রে দলিলের দাতা এবং গ্রহীতার নাম থাকে এবং অপর সূচিপত্রে মৌজার নাম থাকে। অর্থাৎ মৌজার নাম দিয়ে একটি সূচিপত্র তৈরী করা হয় এবং গ্রহীতার ও দাতার নাম দিয়ে আরেকটি সূচিপত্র তৈরী করা হয়। আপনি যদি আপনার জমির দলিলটি তল্লাশি দিতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার দলিলের বালাম অথবা সূচিপত্র এই দুইটির যে কোন একটি তল্লাশি দিতে হবে। 

তবে দলিলের বালাম বইয়ের চেয়ে সূচিপত্র তল্লাশি দেয়া সহজ এবং খরচ কম। সূচিপত্রের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সূচিপত্র তল্লাশি দিয়ে দলিলের তথ্য সংগ্রহ করা যায়। তারপর দলিলের তথ্য দিয়ে খুব সহজে দলিলের সার্টিফাইড কপি পেতে পারেন। এই সার্টিফিই কপি দিয়ে যাবতীয় কাজই করা যায়।

সূচিপত্র তল্লাশির খরচ কত টাকা

সূচিপত্র তল্লাশির খরচ খুবই কম। এই তল্লাশির খরচটি আইন দ্বারা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এক বছরের সূচিপত্র তল্লাশির ফি মাত্র ২০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি বছরের তল্লাশি ফি মাত্র ১৫ টাকা। অর্থাৎ আপনি যদি একাধিক বছর তল্লাশি দিতে চান তাহলে প্রথম বছরের ফি হচ্ছে ২০ টাকা এবং পরবর্তী বছরগুলোর জন্য ১৫ টাকা করে জমা দিতে হবে।

সূচিপত্র তল্লাশির ক্ষেত্রে কিছু টেকনিক অবলম্বন করা যেতে পারে। আপনি যে দলিলটি খুজছেন সেটি কোন সালে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিলো সেটি মনে করার চেষ্টা করবেন। যদি জমি রেজিস্ট্রির সঠিক সাল মনে করতে পারেন তাহলে সেই সালের সূচিপত্র তল্লাশি দিয়ে দলিলের তথ্য বের করতে পারেন। এতে সূচিপত্র তল্লাশির খরচ কম হবে।

অথবা দলিল রেজিস্ট্রির সঠিক সাল মনে না করতে পারলে অনুমানিক কত সাল থেকে কত সালের মধ্যে দলিলটি রেজিস্ট্রি হয়েছিলো সেটা অনুমান করতে পারলে সেই বছরগুলোর সূচিপত্র তল্লাশি করে দলিলের তথ্য পেতে পারেন। অর্থৎ সূচিপত্র তল্লাশির খরচ কমানোর জন্য দলিল রেজিস্ট্রির সঠিক সাল বা আনুমানিক সাল মনে করার চেষ্টা করতে হবে এবং শুধু সেই সালগুলোর সূচিপত্র তল্লাশি করবেন। 

কি কি উপায়ে দলিল তল্লাশি করা যায়?

জমির দলিল তল্লাশি করার এই একটাই উপায় রয়েছে যা এতক্ষণ আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম। এই উপায় ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায়ে জমি দলিল তল্লাশি করা যায়। না। কিন্ত অনেকেই বলে থাকেন অনলাইনে দলিল তল্লাশি করা যায়। 

মুলত দলিলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বালাম বইয়ে এবং সূচিপত্রে লেখা থাকে। আর এখন পর্যন্ত এই সূচিপত্র এবং বালাম বই অনলাইনে উন্মুক্ত করা হয়নি। ভবিষ্যতে সূচিপত্র এবং বালাম বইয়ের তথ্য অনলাইনে উন্মুক্ত করা হবে কি না সে বিষয়ে এখনি সঠিকভাবে কিছু বলা সম্ভব না।

পরিশেষে

আপনার জমির গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস এই দলিল হারিয়ে গেলে কিংবা নষ্ট হলে এবং দলিলের নম্বর, বালাম নম্বর, দলিলের সাল, পৃষ্ঠা নম্বর ইত্যাদি কোন তথ্য জানা না থাকলে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সূচিপত্র তল্লাশি দিয়ে দলিলের তথ্য বের করতে পারবেন। সেই সাথে দল্লিলের তথ্য দিয়ে মূল দলিলের সার্টিফাইড কপি তুলতে পারবেন। 

এই ছিলো পুরাতন দলিল তল্লাশি করার সঠিক উপায়। আশা করি বিস্তারিত বুঝাতে পেরেছি। এ বিষয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টস করবেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করবো। লেখাটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন