নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম

নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই

আপনি কি জানেন অনলাইনের মাধ্যমে শুধু নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করা সম্ভব?  আপনার কাছে যদি শুধু জমির মালিকের নাম থাকে তাহলে ওই মালিকের নামে কতটুকু জমি আছে কতগুলো দাগে জমি আছে, জমির অংশীদার বা মালিক কতজন এসব কিছু খুব সহজেই যাচাই করে দেখা যায়। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে থাকুন তাহলে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য জানতে পারবেন এবং মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই আপনি নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করে দেখে নিতে পারবেন।

প্রয়োজনে জমির মালিকানা যাচাই করার পর যদি খতিয়ানের অনলাইন কপি অথবা সার্টিফাইড কপি তুলে নিতে চান তাহলে সেটাও সম্ভব। কারণ এখন খতিয়ান তোলার জন্য ভূমি অফিসে না গেলেও হয়, অনলাইন থেকেই এই কাজগুলো করে নেয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করা যায়।

Table of Contents

কিভাবে জমির মালিকানা যাচাই করা যায়?

জমির মালিকানা যাচাই করার দুটি উপায় রয়েছে প্রথমত আপনি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করে দেখতে পারবেন। দ্বিতীয়তঃ অনলাইনের মাধ্যমে নিজের হাতে থাকা মোবাইল অথবা কম্পিউটার ব্যবহার করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ওয়েবসাইট eporcha.gov.bd এ ভিজিট করে জমির মালিকানা যাচাই করতে পারবেন।

অনলাইনের মাধ্যমে মূলত জমিটি কত নম্বর খতিয়ানে রয়েছে এবং ওই খতিয়ানের কতগুলো দাগ নম্বর রয়েছে ওই খতিয়ানে কতজন মালিক বা অংশীদার রয়েছে ইত্যাদি চেক করে দেখা যায়। সেই সাথে সরকারি ফি পরিশোধ করে খতিয়ানের কপি উত্তোলন করে নেয়ার জন্য আবেদন করা যায়।

আজকে আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম সম্পর্কে জানবো। নিম্নে উল্লেখিত নির্দেশনা অনুসরণ করে আপনি খুব সহজে কাজটি করতে পারবেন। 

নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই

eporcha.gov.bd

প্রথমে আমাদের বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট https://eporcha.gov.bd সাইটে ভিজিট করতে হবে। তাহলে উপরের নমুনা ছবির মত একটি পেজ দেখতে পাবেন। সেখানে সার্ভে খতিয়ান এবং নামজারি খতিয়ান দুইটি অপশন পাওয়া যাবে। আপনি কোন ধরনের খতিয়ান থেকে জমির মালিকানা যাচাই করতে চাচ্ছেন সেটির উপর ক্লিক করবেন। 

আমি এখানে সার্ভে খতিয়ান থেকে জমির মালিকানা যাচাই করছি। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী খতিয়ান সিলেক্ট করবেন।

সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান

সার্ভে খতিয়ান এর উপর ক্লিক করার পর ঠিক নিচের দিকে একটি টেবিল দেখতে পাবেন। টেবিল থেকে আপনার ঠিকানা সিলেক্ট করতে হবে। টেবিলের প্রথম কলাম থেকে বিভাগ সিলেক্ট করবেন, তারপর জেলা সিলেক্ট করবেন, তারপর উপজেলা সিলেক্ট করবেন, তারপর খতিয়ানের ধরন সিলেক্ট করতে হবে।

এখানে অনেক প্রকার খতিয়ানের তথ্য পাওয়া যাবে, আপনি যে খতিয়ানের তথ্য অনুসন্ধান করবেন সেই খতিয়ানের উপর ক্লিক করবেন। আমি আর এস খতিয়ান এর তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য আর এস খতিয়ানের উপর ক্লিক করছি।

তারপর মৌজা সিলেক্ট করতে হবে। আপনার জমিটি কোন মৌজায় সেই মৌজার নাম সিলেক্ট করতে হবে। তাহলে পরের কলামে ওই মৌজায় যতগুলো খতিয়ান রয়েছে সেই সবগুলো খতিয়ানের তালিকা দেখা যাবে।

যেহেতু আমাদের কাছে মালিকের নাম ব্যতীত অন্য কোন তথ্য নেই সেহেতু আমরা খতিয়ান নম্বর দিয়ে জমির তথ্য অনুসন্ধান করতে পারব না। তাই আমাদের নিচের দিকে থাকা অধিকতর অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করতে হবে।

তাহলে দুটি অপশন দেখতে পাবেন মালিকের নাম এবং দাগ নম্বর। এখানে আপনি মালিকের নাম অথবা জমির দাগ নম্বর যদি থাকে সেটা দিয়েও মালিকানা যাচাই করতে পারবেন। তবে এখন আমরা নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করবো। তাই মালিকের নামের ঘরে জমির মালিকের নামটি লিখতে হবে। বানান ভুল করলে হবে না সঠিক বানান দিয়ে মালিকের নামটি লিখে খুঁজুন বাটনে ক্লিক করতে হবে।

তাহলে ওই নামটি যে খতিয়ানে রয়েছে সেই খতিয়ানটি সামনে চলে আসবে। খতিয়ানটি পাওয়া গেলে খতিয়ানের উপর ডাবল ক্লিক করতে হবে তাহলে নিচের ছবির মত একটি পেজ আসবে সেখানে ওই খতিয়ানে কতগুলো দাগ নম্বর রয়েছে সে তথ্য দেখা যাবে।

খতিয়ানের দাগ নম্বর

এখন এই খতিয়ানে কতজন অংশীদার রয়েছে বা কতজন মালিক রয়েছে সেটি জানার জন্য নিচের দিক থেকে বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করতে হবে তাহলে একসাথে জমির দাগ নম্বর এবং জমির মালিক কতজন সে তথ্য দেখা যাবে।

নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই

মূলত এটুকুই হচ্ছে নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম। আপনার কাছে জমির মালিকের নাম ব্যতীত যদি আর কোন তথ্য না থাকে তাহলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই ওয়েবসাইটে এসে ঠিকানা সিলেক্ট করার পর খতিয়ানের ধরন সিলেক্ট করার পর জমির মালিকের নাম দিয়ে অনুসন্ধান করা যাবে।

যদি ওই মৌজায় ওই নামের কোন মালিক থাকে তাহলে তার খতিয়ানটি সামনে চলে আসবে। তারপর খতিয়ানের উপর ডবল ক্লিক করলে খতিয়ানের কতগুলো দাগ নম্বর রয়েছে খতিয়ানের অংশীদার বা মালিক কতজন এই তথ্যগুলো দেখা যাবে।

খতিয়ানের জন্য আবেদন করার  নিয়ম

এখন আপনি যদি খতিয়ান উত্তোলন করতে চান তাহলে খতিয়ান আবেদন বাটনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে আরেকটি পেজ আসবে সেখানে আপনার এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ ভেরিফাই করার অপশন থাকবে সেটি করতে হবে। তারপরে খতিয়ানার ধরন সিলেক্ট করতে হবে, ফি প্রদান করার মাধ্যম সিলেট করে ফি প্রদান করার পর খতিয়ান তুলে নিতে পারবেন।

যদি খতিয়ানের ধরন অনলাইন কপি সিলেক্ট করেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই খতিয়ানটি ডাউনলোড হয়ে যাবে। আর যদি সার্টিফাইড কপি ডাকযোগে নিজের বাসায় যেতে চান তাহলে খতিয়ানের ধরন সার্টিফাইড কপি সিলেক্ট করতে হবে। তাহলে ৫ থেকে ৭ দিন পর ডাকযোগে খতিয়ানটি আপনার বাসায় পৌঁছে যাবে।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় যে অনলাইন থেকে শুধু নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম খুবই সহজ। মাত্র এক থেকে দুই মিনিট সময়ের মধ্যেই জমির মালিকানা যাচাই করে দেখা যায়। কিন্তু অনেকেরই এ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা নেই। আর সেই কারণেই আপনাদের মাঝে এই পোস্টটি শেয়ার করলাম। অনলাইন থেকে জমির মালিকানা যাচাই করার জন্য হয়তো আপনাদের উপকারে আসবে।

এই ছিল শুধু নাম দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম। আপনি চাইলে উক্ত উপায় অনুসরণ করে জমির মালিকানা যাচাই করতে পারেন অথবা চাইলে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করে দেখে আসতে পারেন।

তবে আমার মতে অনলাইন থেকে যদি জমির মালিকানা যাচাই করা সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে অফিসে যাওয়া আসার কষ্ট করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। 

আজ এ পর্যন্তই, ফিরবো পরবর্তী কোন পোস্ট নিয়ে ততদিন সবাই ভালো থাকবেন। আর এই লেখাটি যদি ভালো লাগে এবং আপনাদের উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন