নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির নিয়ম কি জানুন

নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির নিয়ম কি

দেখা যায় আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা ১৮ বছরের কম বয়স্ক এবং তাদের নামে সম্পত্তি বা জমি জমা রয়েছে। অনেক সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে সেই সম্পত্তি বিক্রয় করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। কিন্ত আপনি চাইলকেই কি নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন? অবশ্যই না। নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করার কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। যদি নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করার দরকার হয় তাহলে আপনাকে সেই নিয়ম কানুনগুলো মেনে তারপর বিক্রি করতে হবে। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে নাবালকের সম্পত্তি কিক্রির নিয়ম কি তা জানাবো। 

আশা করি সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন। তাহলে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির নিয়ম কি সেটা জানতে পারবেন সেই সাথে কাদেরকে নাবালক বলা হয়, নাবালকের সম্পত্তি কে কে বিক্রি করতে পারবেন এবং কিভাবে বিক্রি করতে পারবেন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক আজকের বিষয়-

Table of Contents

নাবালক কাকে বলে

সাবালকত্ত্ব আইন ১৮৭৫ এর ৩ ধারার নিয়ম অনুসারে, কোন ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত সে নাবালক। অর্থাৎ বলা যায় আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যার বয়স ১৮ বছরের কম তাকে নাবালক বলা হয়।

কে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির করতে পারবে

বাংলাদেশের প্রচলিত ১৮৭২ সালের চুক্তি আইন অনুযায়ী কোন নাবালক বা ১৮ বছরের কম বয়সী কোন ব্যক্তি কোন প্রকার চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না। ফলে কোন নাবালক ইচ্ছা করলেই কোন সম্পত্তি বিক্রি বা হস্থান্তর করতে পারে না।

কিন্ত ওই নাবালকের যদি চিকিৎসার জন্য কিংবা উচ্চ শিক্ষার জন্য কিংবা যে কোন জরুরী কাজে টাকার দরকার হয় তাহলে তো অবশ্যই সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে। কিন্ত কি নিয়ম অনুসরণ করে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে?

আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী নাবালকের পিতা নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন। তাছাড়া নাবালকের পিতা যদি কাউকে উইল করে দেয় তাহলে সেই উইলকারী ব্যক্তি নাবালকের পক্ষে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন।

নাবালকের পিতা যদি জীবিত না থাকে তাহলে নাবালকের দাদা নাবালকের প্রয়োজনে তার সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন। অথবা নাবালকের দাদা যদি কাউকে উইল করে দেয় তাহলে সেই উইলকারী ব্যক্তি নাবালকের পক্ষে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন। 

কিন্ত যদি এমন হয় নাবালকের পিতা এবং দাদা কেউ জীবিত নেই। অথচ নাবালকের প্রয়োজনে সম্পত্তি বিক্রি করা লাগবে। তাহলে সেই সম্পত্তি কিভাবে বিক্রি হবে? নাবালকের মাতা, ভাই-বোন, চাচা, চাচীসহ অন্যান্য আত্মীস্বজনের কেউই সরাসরি নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবে না।

নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির নিয়ম কি

নাবালকের পিতা এবং দাদা যদি জীবিত না থাকেন এবং নাবালকের উন্নত চিকিৎসা কিংবা উচ্চ শিক্ষা কিংবা যে কোন জরুরী প্রয়োজনে সম্পত্তি বিক্রির প্রয়োজন হয় তাহলে নাবালকের মাতা, ভাই-বোন, চাচা ইত্যাদি ব্যক্তিদের মাধ্যমেই সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে।

তবে নাবালকের মাতা, ভাই-বোন, চাচা এদের মধ্যে যদি কেউ নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে চান তাহলে তাদেরকে অবশ্যই দুইটি আইনি প্রোসেস বা ধাপের মধ্য দিয়ে সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে। 

প্রথম ধাপ হচ্ছে যিনি নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করবেন তাকে নাবালকের অভিভাবক নিয়োগ হতে হবে। নাবালক যে এলাকায় বসবাস করে সেই এলাকার পারিবারিক আদালতে গার্ডিয়ানশীপ মামলা করে নাবালকের অভিভাবক নিয়োগ হতে হবে।

নাবালকের অভিভাবক নিয়োগ হওয়ার জন্য গার্ডিয়ানশীপ মামলার ও কিছু প্রোসেস রয়েছে। যদি নাবালকের মাতা বাদী হয়ে পারিবারিক আদালতে গার্ডিয়ানশীপ মামলা করেন তাহলে নাবালকের ভাই, বোন, চাচা, চাচী ইত্যাদি ব্যক্তিদেরকে এই মামলায় পক্ষ করতে হবে।

তারপর আদালতের যে প্রসিডিং রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর আদালত যদি মনে করেন নাবালকের মাতাকে তার অভিভাবক নিয়োগ করা যেতে পারে। তাহলে নাবালকের মাতা তার অভিভাবক হিসেবে নিয়োগ হবেন। পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে অভিভাবক নিয়োগ হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে, অভিভাবক নিয়োগ হয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সহকারী জজ আদালতে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রয় করার জন্য একটি অনুমতি চাইতে হবে। সহকারী জজ আদালতে সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য যে আবেদন করবেন সেই আবেদনে নাবালকের উন্নত চিকিৎসা বা উচ্চ শিক্ষা বা নাবালকের জন্য জরুরী যে প্রয়োজনে সম্পত্তি বিক্রি করবেন সেটা স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে।

সহকারী জজ আদালত আপনার আবেদনের সকল প্রোসেস সম্পন্ন করার পর বিজ্ঞ আদালত যদি মনে করেন সম্পত্তি বিক্রয় করার প্রয়োজন। তাহলে বিজ্ঞ আদালত আপনাকে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রয় করার অনুমতি প্রদান করবেন। 

আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর আপনি শুধুমাত্র নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন। তাছাড়া নাবালকের সম্পত্তি কোন প্রকার দান, উইল, হেবা ইত্যাদি কোনটাই করা যাবে না। নাবালকের প্রয়োজনেই কেবলমাত্র সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবে।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় যে, নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির নিয়ম কেবল আইনি প্রক্রিয়া দ্বারা সীমাবদ্ধ। উল্লেখিত আইনি প্রোসেস ছাড়া যদি কেউ নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করে তাহলে সেটা বৈধ হবে না। তাই প্রয়োজন হলে অবশ্যই সম্পূর্ণ প্রোসেস অনুসরণ করে তারপর নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে। 

এই ছিলো নাবালকের সম্পত্তি বিক্রির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশা করি সকলে বুঝতে পেরেছেন। এ বিষয়ে যদি আরো ভালো করে জানতে চান বা বুঝতে চান তাহলে অবশ্যই কোন বিজ্ঞ আইনজীরির সাথে যোগাযোগ করবেন। ধন্যবাদ..!

আরো পড়ুন-

মামলা স্থগিত করার নিয়ম কি জানুন

জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় বিস্তারিত জানুন

নামজারি আবেদন চেক করার নিয়ম কি দেখুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন