সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার নিয়ম কি জানুন

সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার নিয়ম

আপনি যদি ভূমিহীন হয়ে থাকেন কিংবা ১০ শতকের কম জমির উপর বসতবাড়ী থাকে তাহলে আপনি চাইলে খুব সহজে সরকারি খাস জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে ভোগদখল করতে পারবেন। হ্যা, আজকে সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার নিময় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে চলেছি এই পোষ্টের মাধ্যমে। আপনি সর্বোচ্চ ১০০ শতক বা এক একর খাস কৃষি জমি লিজ নিয়ে ভোগদখল করার মাধ্যমে নিজের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবেন। 

আপনারা যারা সরকারি খাস জমি লিজ নিতে চান তারা সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন। তাহলে আপনার এলাকায় কোথায় কোথায় খাস জমি রয়েছে সেটা জানার উপায়সহ খাস জমি লিজ নেয়ার জন্য করণীয় কি, কারা খাস জমি লিজ নিতে পারবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক-

Table of Contents

লিজ বা বন্দোবস্ত কি?

লিজ বা বন্দোবস্ত হচ্ছে সরকারের যে খাস সম্পত্তি রয়েছে সেই সম্পত্তি সরকারের কাছ থেকে ভোগদখল করার অনুমতি নেয়া। অর্থাৎ সরকারি খাস সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে ভোগদখল করার অধিকার পাওয়াই হচ্ছে লিজ বা বন্দোবস্ত।

সরকারি খাস সম্পত্তি সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয়া যায়। একজন ব্যক্তি চাইলে সর্বোচ্চ ১০০ শতক বা এক একর জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ভোগদখল করতে পারে। সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার জন্য প্রথমে জানতে হবে আপনার এলাকায় কোন কোন জমিগুলো খাস অবস্থায় রয়েছে। তারপর সেই জমি লিজ নেয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।

খাস জমি খুজে পাওয়ার উপায়

আপনার এলাকায় কোন কোন জমিগুলো খাস হয়েছে সেগুলো জানার জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যেতে হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ৮ নম্বর রেজিস্ট্রার নামে একটি রেজিস্ট্রার থাকে। ৮ নম্বর রেজিস্ট্রারে ওই এলাকার সকল খাস জমির তালিকা অন্তর্ভূক্ত থাকে।

ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে ৮ নম্বর রেজিস্ট্রার তল্লাশি করে জানতে হবে আপনার এলাকায় কোন কোন জমিগুলো খাস অবস্থায় রয়েছে। ৮ নম্বর রেজিস্ট্রারে ৪ টি পার্টে খাস জমিগুলো অন্তর্ভূক্ত থাকে। 

৮ নং রেজিস্ট্রারের প্রথম পার্টে নদী, নালা, রাস্তা-ঘাটের সম্পত্তিগুলো অর্ন্তর্ভূক্ত থাকে। অর্থাৎ যে সম্পত্তি সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য ব্যবহার করে থাকে। সেই সকল জমির তথ্য ৮ নং রেজিস্ট্রারের প্রথম পার্টে থাকে। 

৮ নং রেজিস্ট্রারের ২ নম্বর পার্টে থাকে সরকারি কৃষি ও অকৃষি খাস জমি। আপনি চাইলে এই কৃষি ও অকৃষি জমিগুলো থেকে সর্বোচ্চ ১০০ শতক জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে ভোগদখল করতে পারবেন।

৮ নং রেজিস্ট্রারের ৩ নম্বর পার্টে সেই সকল জমির তথ্য পাবেন যে জমিগুলো সরকার নানা ধরণের সরকারি প্রয়োজনে জনগণের নিকট থেকে অধিগ্রহণ করেছে বা ক্রয় করেছে।

৮ নং রেজিস্ট্রারের ৪ নম্বর পার্টে যে সম্পত্তিগুলো নদী ভাঙ্গনের কারণে খাস হয়ে গিয়েছে সেই সকল জমি অন্তর্ভূক্ত থাকে।

কারা সরকারি খাস জমি লিজ নিতে পারবে

১৯৯৭ সালের পূর্বে যে কেউ চাইলেই সরকারি খাস জমি লিজ নিতে পারতো। কিন্ত ১৯৯৭ সালে সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরী হয়। বর্তমানে খাস জমি লিজ নিতে হলে ১৯৯৭ সালের নীতিমালায় উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী লিজ নিতে হবে।

সরকারি খাস কৃষি জমি লিজ নেয়ার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে ৩ টি শর্ত মানতে হবে বা ৩ শ্রেণীর মানুষ আবেদন করতে পারবে। তাহলেই আপনি সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। শর্ত ৩টি হচ্ছে-

  • প্রথমত আপনাকে কৃষক হতে হবে।
  • দ্বিতীয়ত আপনাকে ভূমিহীন হতে হবে। 
  • তৃতীয়ত আপনার বসতবাড়ী থাকলেও জমির পরিমাণ ১০ শতকের মধ্যে হতে হবে। তবে ১০ শতকের বেশি থাকলে আবেদন করতে পারবেন না।

এই ৩ শ্রেণীর মানুষ আবেদন করার পর সর্বপ্রথম দেখা হয় আবেদনকারীদের মধ্যে কোন দুঃস্থ মুক্তি'যো'দ্ধা পরিবার আছে কি না। যদি কোন দুঃস্থ মুক্তি'যো'দ্ধা পরিবার থাকে তাহলে সর্বপ্রথম তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং জমি লিজ দেয়া হয়।

এরপর দেখা হয় আবেদনকারীদের মধ্যে কেউ নদী ভাঙ্গণের ফলে ভূমিহীন হয়েছে কি না। যদি থাকে তাহলে তাদেকে অগ্রাধিকার দিয়ে খাস জমি লিজ দেয়া হয়।

তারপর দেখা হয় আবেদনকারীদের মধ্যে সক্ষম পুত্রসহ কোন বিধবা স্ত্রী রয়েছে কি না। যদি থাকে তাহলে তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে খাস জমি লিজ দেয়া হয়।

তারপরে ভূমিহীন কৃষকদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

ভূমিহীন কৃষকদের অগ্রাধিকার দেয়ার পর যারা জমি অধিগ্রহণের কারণে ভূমিহীন হয়েছে এমন আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার নিয়ম

সরকারি খাস জমি লিজ দেয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট ডিসি মহোদয়ের রয়েছে। একমাত্র তিনিই পারেন এই খাস সম্পত্তি সাধারণ মানুষের মাঝে লিজ দিতে। সরকারি খাস কৃষি জমি লিজ নেয়ার জন্য আপনার জেলার ডিসি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর আবেদন করতে হবে।

খাস জমি লিজ নেয়ার আবেদন করার পরে অফিসিয়াল কিছু কার্যক্রম বাকী থাকে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে ডিসি অফিস, এসি ল্যান্ড অফিস এবং ভূমি অফিস থেকে সম্পন্ন হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক মহোদয় এই সরকারি খাস সম্পত্তি আপনাকে বন্দোবস্ত প্রদান করবেন।

সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক মহোদয় আবেদনকারীর সকল কাগজপত্র পর্যালোচনা করে যখন নিশ্চিত হবেন যে, এই ব্যক্তিকে সরকারি খাস কৃষি জমি বন্দোবস্ত দেয়া হচ্ছে তখন আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সেলামী গ্রহণ করে একটি কবুলিয়ত বা পাট্টা প্রদান করবেন।

এই কবুলিয়ত বা পাট্টা প্রদান করার পর সেটার একটি কপি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করবেন। সাব-রেজিস্ট্রার যখন এই কবুলিয়ত বা পাট্টা টি পাবেন তখন আপনার উপস্থিতিতে সেটা আপনার নামে রেজিস্ট্রি করে দেবেন।

কবুলিয়ত বা পাট্টা রেজিস্ট্রি হওয়ার পরে রেজিস্ট্রির কপি নিয়ে সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিসে গিয়ে নামজারি আবেদন করতে হবে। নামজারির মাধ্যমে আপনার নামে খাস জমি রেকর্ড হওয়ার পর আপনি জমিটি ৯৯ বছরের জন্য ভোগদখল করতে পারবেন।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় যে, সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার নিয়ম সহজ হলেও যে কেউ চাইলেই এই সম্পত্তি লিজ নিতে পারবে না। কারণ ১৯৯৭ সালের নীতিমালা অনুযায়ী খাস জমি লিজ নিতে হলে আবেদনকারীকে একজন কৃষক হতে হবে, ভূমিহীন বা সর্বোচ্চ ১০ শতক জমির মালিক হতে হবে। এই তিন শ্রেণীর ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কোন শ্রেণী পেশার মানুষ খাস জমি লিজ বা বন্দোবস্ত করে নিতে পারবে না। 

এই ছিলো সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশা করি আপনাদেরকে বোঝাতে পেরেছি। পোষ্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই অন্যদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ..!

আরো পড়ুন-

বি এস খতিয়ান অনলাইনে দেখার নিয়ম

ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের করণীয় কি জানুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন