আমরা অনেকেই জানি না যে আমাদের দেশে জমির শ্রেণী কত প্রকার। অথচ জমির শ্রেণী খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিছু কিছু কাজের সময় যেমন- ভূমি জরিপকালে এবং ভূমি হস্তান্তরের জন্য দলিলে লেখার সময় জমির শ্রেণী উল্লেখ করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেই সাথে জমির শ্রেণীর উপর নির্ভর করেই জমির খাজনা নির্ধারণ হয়। কিছু কিছু শ্রেণীর জমির খাজনা বেশি হয়ে থাকে আবার কিছু কিছু শ্রেণীর জমির খাজনা কম। তাই সকলের উচিত জমির শ্রেণী কত প্রকার এবং সেগুলো কি কি জেনে রাখা। তাহলে প্রয়োজনের সময় জমির সঠিক শ্রেণী ব্যবহার করতে পারবেন।
আজকে মুলত আমরা জানবো জমির শ্রেণী কত প্রকার ্এবং সেগুলো কি কি। আপনারা যারা এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে চান তারা অবশ্যই সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন। তাহলে জমির শ্রেণী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবেন এবং ভবিষ্যতি আপনার জমির শ্রেণী নিয়ে কোন সমস্যায় পড়বেন না। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক-
Table of Contents
জমির শ্রেণী
আমাদের আশে পাশে যে জমিগুলো আমরা দেখতে পাই সেই সকল জমিগুলো কিন্ত একই কাজে ব্যবহৃত হয় না। কোন জমির উপর দিয়ে রাস্তা রয়েছে, কোন জমির উপরের বসত বাড়ি তৈরী হয়েছে, আবার কোন জমিতে ফসল ফলানো হচ্ছে, আবার কোন জমির উপর দিয়ে নদী বয়ে গেছে, আবার কোন জমির উপর জঙ্গল রয়েছে ইত্যাদি।
জমির ববহারের উপর নির্ভর করে জমির শ্রেণীবিভাগ করা হয়। আর জমির শ্রেণীর উপর ভিত্তি করেই জমির খাজনা নির্ধারণ করা হয়। যে জমির উপর বসত বাড়ি সেই জমির খাজনা বেশি হয়ে থাকে। আবার যে জমির উপর বাঁশ ঝাড় সেই জমির খাজনা তুলানামূলক কম হয়ে থাকে।
জমির শ্রেণী কত প্রকার
জমির শ্রেণী প্রাচীনকালে একরকম ছিলো এবং বর্তমান সময়ে এসে এক রকম হয়েছে। অর্থাৎ কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রচীনকালে জমির শ্রেণী ছিলো প্রধানত ৪ প্রকার। বর্তমান সময়ে এসে জমির শ্রেণী হয়েছে প্রধানত ৫ প্রকার।
আমরা ্প্রাচীনকাল এবং বর্তমান সময়ের জমির শ্রেণী সম্পর্কে জানবো যে, কোন শ্রেণীর জমি কি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
প্রচীনকালে জমির শ্রেণী
প্রাচীনকালে জমির শ্রেণী ছিলো প্রধানত ৪ প্রকারের। যেমন-
- বাস্তু শ্রেণীর জমি
- খেত শ্রেণীর জমি
- খিল শ্রেণীর জমি
- গোচর শ্রেণীর জমি
বাস্তু শ্রেণীর জমি
যে সকল জমির উপর বসত বাড়ি ছিলো প্রাচীনকালে সেই সকল জমি বাস্তু শ্রেণীর অন্তর্গত ছিলো। অর্থাৎ সেই সকল জমিকে বলা হতো বাস্তু জমি।
খেত শ্রেণীর জমি
প্রচীনকালে যে সকল জমিতে কৃষি কাজ করা হতো। অর্থাৎ নানা ধারণের ফসল ফলানো হতে সেই সকল জমি খেত শ্রেণীর অন্তর্গত ছিলো।
খিল শ্রেণীর জমি
প্রাচীনকালে কৃষি জমি ব্যতীত অন্য যে সকল আবাদযোগ্য জমি ছিলো সেই জমিগুলো খিল শ্রেণীর অন্তর্গত ছিলো।
গোচর শ্রেণীর জমি
প্রাচীনকালে যে সকল জমিতে কোন প্রকার চাষাবাদ করা হতো না। যেখানে শুধুমাত্র গরু, মহিষ চারানো হতো সেই সকল জমি গোচর শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
বর্তমান সময়ে জমির শ্রেণী
বর্তমান সময়ে জমির শ্রেণী প্রধানত ৫ প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-
- ভিটি শ্রেণীর জমি
- নাল শ্রেণীর জমি
- বাইদ শ্রেণীর জমি
- সিকস্তি শ্রেণীর জমি
- পরস্থী শ্রেণীর জমি
ভিটি শ্রেণীর জমি
ভিটা বা ভিটি। অর্থাৎ বসত বাড়ির জমির শ্রেণীকে বর্তমানে ভিটি বলা হয়ে থাকে। জমি হস্তান্তরের সময় দলিলে কিংবা জরিপের সময় পর্চায় বসত বাড়ির জমির শ্রেণীর নাম লেখা হয় ভিটি।
নাল শ্রেণীর জমি
যেগুলো একটু উচু প্রকৃতির আবাদযোগ্য ফসলী জমি সে সকল জমির শ্রেণী হয়ে থাকে নাল। এই সকল জমিতে বছরে ২ থেকে ৩ বার ফসল ফলানো যায়।
বাইদ শ্রেণীর জমি
যেগুলো একটু নিচু প্রকৃতির আবাদযোগ্য ফসলী জমি সে জমিগুলো বাইদ শ্রেণীর জমি বলা হয়। এই বাইদ শব্দটি ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এলাকায় বহুল প্রচলিত।
সিকস্তি শ্রেণীর জমি
যে জমিগুলো নদী ভাঙ্গণের ফলে বিলীন হয়ে গেছে, খাস হয়ে গেছে সেই সকল জমিগুলোকে সিকস্তি শ্রেণীর জমি বলা হয়।
পরস্থী শ্রেণীর জমি
পরস্থী শ্রেণীর জমি হচ্ছে সিকস্তি শ্রেণীর জমির বিপরীত। অর্থাৎ নদী ভাঙ্গণের পর যখন চর জেগে ওঠে সেই সকল চর এলাকার জমিগুলোকে পরস্থী শ্রেণীর জমি বলা হয়।
পরিশেষে
পরিশেষে বলা যায় যে, জমির শ্রেণী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে এবং ভূমি জরিপকালে জমির শ্রেণী সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ না করতে পারলে পরবর্তীতের নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই বিষয়ে লক্ষ্য রেখে জমির দলিল তৈরী করতে হবে।
এই ছিলো জমির শ্রেণী কত প্রকার এবং কি কি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ..!
আরো পড়ুনঃ-
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন