নামজারি খতিয়ান চেক করার নিয়ম কি জানুন

নামজারি খতিয়ান চেক করার নিয়ম

জমি-জমা ক্রয় করার পর কিংবা ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া পর সেগুলো নতুন মালিকের নামে রেকর্ড করে নিতে হয় নামজারি আবেদনের মাধ্যমে। নামজারি আবেদন নিষ্পত্তি হলে একটি নতুন খতিয়ান তৈরী হয়। সেই নতুন নামজারি খতিয়ান চেক করার নিয়ম সম্পর্কে আজকের এই পোষ্টে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করতে চলেছি। আপনারা যদি নামজারি খতিয়ান চেক করতে চান তাহলে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন তাহলে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।

নামজারি খতিয়ান দুইটি উপায়ে চেক করা যায়। তাদের মধ্যে একটি উপায়ে খতিয়ানের তথ্য ভুল আছে কি না তা যাচাই করে দেখতে হয়। আর দ্বিতীয় উপায়ে নামজারি খতিয়ান চেক করাসহ উত্তোলনের জন্য আবেদন করা যায়। আমরা দুইটি উপায় সম্পর্কেই বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-

নামজারি খতিয়ান ও সার্ভে খতিয়ন কি?

নামজারি খতিয়ান চেক করার বিষয়ে জানার আগে আমরা সার্ভে খতিয়ান ও নামজারি খতিয়ান সম্পর্কে একটু জেনে নেই। আমরা https://eporcha.gov.bd সাইটে ভিজিট করলে নামজারি খতিয়ান ও সার্ভে খতিয়ান এই দুইটি অপশন দেখতে পাই। কোন খতিয়ান কখন তৈরী হয় সেটা কি জানেন? আসুন জেনে নেই-

সার্ভে খতিয়ান কি?

দীর্ঘ ২০ বছর ৩০ বছর পর পর রেকর্ডীয় জরিপ কার্যক্রম হয়ে থাকে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখন পর্যন্ত ৪ ধরনের রেকর্ডীয় জরিপ খতিয়ান হয়েছে।

  • সি এস রেকর্ডীয় জরিপ খতিয়ান
  • এস এ রেকর্ডীয় জরিপ খতিয়ান
  • আর এস রেকর্ডীয় জরিপ খতিয়ান
  • বি এস বা বিআরএস রেকর্ডীয় জরিপ খতিয়ান। যেটি বর্তমানে চলমান রয়েছে।

এই যে সময়ে সময়ে জমি জমা রেকর্ডের কাজ হয়েছে এবং এই রেকর্ডের সময় একজন মালিকের সকল জমির দাগ নম্বর এক বা একাধিক খতিয়ানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ একজনের যদি ৫ টি খতিয়ান থাকে তাহলে রেকর্ডের সময় ওই ৫ টি খতিয়ানের সকল জমি একটি খতিয়ানের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয়। আর এই খতিয়ানকে সার্ভে খতিয়ান বলা হয়।

নামজারি খতিয়ান কি?

রেকর্ডীয় জরিপ খতিয়ান তো সব সময় তৈরী হয় না। কিন্ত জমি জমা মালিকানা পরিবর্তন সব সময়ই হয়। আপনি কোন ব্যক্তির নিকট থেকে জমি ক্রয় করেন অথবা ওয়ারিশ সূত্রে পান অথবা দানপত্র দলিলের মাধ্যমে পান, অর্থাৎ যে কোন উপায়ে জমির মালিক হন তাহলে সেই জমি নিজের নামে রেকর্ড করে নিতে হয়। 

জমি প্রাপ্তির পর সেই জমি রেকর্ড হলে আপনার নামে নতুন একটি খতিয়ান তৈরী হয়ে যায়। অর্থাৎ জমি জমা হস্থান্তরের ফলে নতুন মালিকের নামে যে নতুন খতিয়ানটি তৈরী হয় সেটিই হচ্ছে নামজারি খতিয়ান।

নামজারি খতিয়ান চেক করার নিয়ম

আগেই বলেছি নামজারি খতিয়ান দুইটা উপায়ে চেক করা যায়। আমরা এই দুইটা উপায় সম্পর্কেই জানবো। 

নামজারি খতিয়ান চেক করার প্রথম উপায়

জমি জমা প্রাপ্তি হওয়ার পর যখন নামজারি করার জন্য আবেদন করবেন তখন সেই আবেদন নিষ্পত্তি হতে ২৮ দিনের মত সময় লাগে। এই সময়ে আবেদনের উপর অফিসিয়ালী কিছু কার্যক্রম চলমান থাকে। আপনি চাইলে https://mutation.land.gov.bd আপনার নামজারি আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা চেক করে দেখতে পারেন।

অনলাইনের মাধ্যমে নামজারি আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা চেক করার সময় সেখানে অন্যান্য অপশনের সাথে খসড়া খতিয়ান দেখুন এবং খতিয়ানের করণীক ভুল সংশোধন নামে দুইটা অপশন পাবেন। 

আপনার নামজারি আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার আগে এ্ খসড়া খতিয়ান যাচাই করে দেখা অবশ্যই উচিত। কারণ অনেক সময় দেখা যায় খতিয়ানের মধ্যে কিছু করণীক ভুল থাকে যেমন- নামের বানান ভুল, গ্রামের নামের বানান ভুল, ঠিকানা ভুল ইত্যাদি। 

খসড়া খতিয়ান যাচাই করে যদি কোন প্রকার ভুল পাওয়া যায় তাহলে খতিয়ানের করণীক ভুল সংশোধন অপশনে ক্লিক করে ভুলের বিবরণ উল্লেখ করে দেবেন। তাহলে চুড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশের পূর্বে সেই ভুলগুলো সংশোধন করে দেয়া হয়।

চুড়ান্ত নামজারি খতিয়ান চেক করার উপায়

নামজারি আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পর আপনি এমনিতেই একটি খতিয়ানের কপি পাবেন। কারন নামজারি আবেদন করার সময় আপনার থেকে খতিয়ানের ফি ১০০ টাকা নিয়ে নেয়া হয়। 

কিন্ত যদি কোন না কোন কারনে সেই খতিয়ানটি হারিয়ে ফেলেন কিংবা না পান তাহলে নামজরি খতিয়ান চেক করে দেখার পাশাপাশি ্আপনি খতিয়ান তোলার জন্য আবেদন করতে পারবেন। নামজারি খতিয়ানের আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নে ধাপে ধাপে সকল তথ্য উল্লেখ করা হলো-

Eporcha.gov.bd সাইটে প্রবেশ

নামজারি খতিয়ান চেক করার জন্য প্রথমে ভিজিট করুন https://eporcha.gov.bd ওয়েবসাইটে এবং স্ক্রোল করে একটু নিচের দিকে গেলেই নামজারি খতিয়ান অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করুন। তাহলে নিচের নমুনা ছবির মত একটি টেবিল দেখতে পাবেন। 

নামজারি খতিয়ান চেক ঠিকানা সিলেকশন

Eporcha gov bd

এই টেবিল থেকে আপনার ঠিকানা সিলেক্ট করতে হবে।

  • টেবিলের প্রথম কলাম থেকে আপনার বিভাগ সিলেক্ট করুন। 
  • দ্বিতীয় কলাম থেকে জেলা সিলেক্ট করুন। 
  • তৃতীয় কলাম থেকে আপনার উপজেলা সিলেক্ট করুন। 
  • চতুর্থ কলাম থেকে মৌজা সিলেক্ট করুন। 
  • পঞ্চম কলামে খতিয়ানের তালিকায় আপনার মৌজার সবগুলো খতিয়ান দেখতে পাবেন। 

এখানে আপনার খতিয়ান নম্বর লিখে খুজুন বাটনে ক্লিক করলে খতিয়ানটি পেয়ে যাবেন এবং মালিকের নাম দেখা যাবে। 

নামজারি খতিয়ান চেক

এখন খতিয়ানের ্উপর ডাবল ক্লিক করুন তাহলে নিচের নমুনা ছবির মত খতিয়ানের দাগ নম্বরগুলো দেখতে পাবেন।

খতিয়ান চেক

প্রথমে ১ নং ছবির মত পেজ আসবে। সেখানে খতিয়ানের সকল দাগ নম্বর দেখা যাবে। তবে খতিয়ানে ৬-৭ টির বেশি দাগ নম্বর থাকলে সবগুলো এই পেজ থেকে দেখা যাবে না। তার জন্য বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করবেন। তাহলে ২ নং ছবির মত পেজ আসবে। এখান থেকে খতিয়ানের সকল দাগগুলো দেখা যাবে এবং মালিকের নাম দেখা যাবে। 

মুলত অনলাইন থেকে ফ্রিতে খতিয়ানের এই সকল তথ্যই দেখা যায়। এর বেশি কিছু দেখতে হলে কিংবা খতিয়ানের অনলাইন কপি অথবা খতিয়ানার সত্যায়িত কপি পেতে চাইলে খতিয়ান আবেদন বাটনে ক্লিক করে একটি আবেদন সাবমিট করতে হবে।

নামজারি খতিয়ান আবেদন

নামজারি খতিয়ান আবেদন

খতিয়ান আবেদন বাটনে ক্লিক করলে উপরের নমুনা ছবির মত একটি বড় ফরম আসবে। ফরমের শুরুতে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ এবং মোবাইল নম্বর লিখে যাচাই করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে।

তাহলে নিচের দিকে আবেদনকারীর ইংরেজি নাম এবং ঠিকানা দেখা যাবে। ঠিকানার নিচে আবেদনের ধরণ কি সে বিষয়ে সিলেক্ট করে দিতে হবে। ফরমের নিচের অংশটা নিচের নমুনা ছবির মত দেখা যাবে। 

অনলাইনে নামজারি খতিয়ান আবেদন

আবেদনের ধরণের মধ্যে দুইটা অপশন রয়েছে অনলাইন কপি এবং সার্টিফাইড কপি। আপনি কি নামজারি খতিয়ানের অনলাইন কপি তুলবেন না কি সার্টিফাইড কপি তুলবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তারপর অপশনটা সিলেক্ট করবেন। 

নামজারি খতিয়ানের অনলাইন কপি তোলার খরচ হচ্ছে ১০০ টাকা। পেমেন্ট করার সাথে সাথে খতিয়ানটি ডাউনলোড হয়ে যাবে। তারপর আপনি চেক করতে পারবেন। 

কিন্ত যদি নামজারি খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি নিতে চান তাহলেও ফি ১০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে সাথে সাথে পাবেন না, অফিসে গিয়ে সংগ্রহ করতে হবে অথবা ডাকযোগে পেতে পারেন। 

নামজারি খতিয়ান সার্টিফাইড কপির ফি

নামজারি খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পেতে হলে কম করে ৭ দিন সময় হাতে রাখতে হবে। আর ডাকযোগে পেতে চাইলে পোষ্ট ফি আরো ৪০ টাকা পে করতে হবে। অর্থাৎ ডাকযোগে নামজারি খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি নিতে হলে আপনাকে ১৪০ টাকা ফি পরিশোধ করতে হবে। 

আমি এখানে অনলাইন কপির জন্য আবেদন করবো। আবেদন করার ্ক্ষেত্রে পরবর্তী ধাপের মধ্যে রয়েছে ফি পরিশোধের মাধ্যমে সিলেক্ট করা। আমি আমার সুবিধার্থে বিকাশ অপশন সিলেক্ট করছি। তার নিচে একটি সাধারণ অংক রয়েছে সেটি যোগ করে ফলাফল বসিয়ে পরবর্তী ধাপ (ফি পরিশোধ) বাটনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে পেজটি লোড হয়ে ফি পরিশোধের অপশনে নিয়ে যাবে। 

নামজারি খতিয়ান ফি পরিশোধ

  • প্রথম ১ নং নমুনা ছবির মত পেজ আসবে। সেখানে আপনার বিকাশ নম্বর লিখে Confirm বাটনে ক্লিক করবেন। 
  • তারপর ২ নং নমুনা ছবির মত পেজ আসবে এবং আপনার মোবাইলে একটি যাচাইকরণ কোড আসবে। সেটি লিখে Confirm বাটনে ক্লিক করুন।
  • তারপর ৩ নং নমুনা ছবির মত পেজ আসবে। সেখানে আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বর লিখে Confirm বাটনে ক্লিক করুন।

নামজারি খতিয়ান ডাউনলোড

পিন নম্বর Confirm হওয়ার সাথে সাথে আপনার নামজারি খতিয়ানটি অটোমেটিক প্রিভিউ হয়ে যাবে। তারপর আপনি সেটিকে সেভ কিংবা ডাউনলোড করে নেবেন। যা দেখতে নিচের নমুনা ছবির মত দেখা যাবে।

নামজারি খতিয়ান ডাউনলোড

অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা নামজারি খতিয়ানের উপর কোন প্রকার অফিসিয়াল সীল এবং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর থাকবে না। অফিসিলাল সীলসহ কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর পেতে হলে সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করতে হবে।

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় নামজারি খতিয়ান চেক করা এবং খতিয়ানের জন্য আবেদন করার নিয়ম খুব বেশি কঠিন কিছু না। আপনি চাইলে নিজেই নিজের মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করে আবেদন করতে পারবেন এবং বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে পারবেন।

এই ছিলো নামজারি খতিয়ান চেক করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। এ বিষয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টস করবেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। এ বিষয়ে আপনার বন্ধুদের অবগত করার জন্য লেখাটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন