জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় বিস্তারিত জানুন

জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায়

অনেক সময় দেখা যায় ভূমি জরিপকালে ভুলবসত একজনের জমি অন্য জনের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। এমন হলে তখন অবশ্যই চিন্তা হয় যে জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায়। এতে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই। আপনি যদি জমির প্রকৃত মালিক হন তাহলে খুব সহজে জমির রেকর্ড সংশোধন করে নিতে পারবেন। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো। 

সেই সাথে আপনারা আরো জানতে পারবেন কোথায় কিভাবে জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলা করবেন এবং মামলার শেষ হতে কতদিন সময় লাগতে পারে। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক-

Table of Contents

জমির রেকর্ড খতিয়ান

কোন না কোন কারণে প্রকৃত মালিকের নামে জমি রেকর্ড না হয়ে যদি অন্যের নামে জমি রেকর্ড হয়ে যায় তার মানে কিন্ত এটা নয় যে, যার নামের রেকর্ড হলো তিনি জমির মালিক হয়ে গেলেন। আর যিনি জমির প্রকৃত মালিক তিনি তার সত্ব হারিয়ে ফেললেন। কারণ জমির মালিকানা প্রমাণ করতে হয় সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে নিবন্ধিত দলিলের মাধ্যমে। 

আর রেকর্ড খতিয়ান মূলে যারা জমির মালিকানা দাবী করেন তাদের বংশ পরম্পরায় ধারাবাহিকভাবে সি এস খতিয়ান থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যতগুলো খতিয়ান তৈরী হয়েছে তার সবগুলো খতিয়ান নিজেদের নামে থাকতে হবে। তবেই আপনি রেকর্ড খতিয়ান মুলে জমির মালিকানা দাবী করতে পারবেন। 

আপনার দলিল আছে এবং সকল রেকর্ড খতিয়ান রয়েছে কিন্ত হাল সালের রেকর্ডটি ভুল করে অন্যের নামে হয়ে গেছে শুধু এই কারণে আপনি জমির মালিকানা হারাবেন না। আপনি খুব সহজই জমির ভুল হওয়ার রেকর্ডটি সংশোধন করে নিতে পারবেন।

জমির রেকর্ড ভুল হওয়ার কারণ

জমির রেকর্ড ভুল হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। এমনও দেখা যায় একজন মালিকের প্রচুর জমি রয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় সেগুলো অবস্থিত। ফলে তিনি সেই জমিগুলো অন্যকে চাষাবাদ করার জন্য দিয়েছেন কিংবা ভাড়া দিয়ে রেখেছেন ইত্যাদি। আর ব্যস্ততার কারণে জমির মালিকে জমি থেকে অনেক দুরে থাকতে হয়েছে।

এমন সময় জমির জরিপকারকরা এলাকায় জরিপ করার জন্য আসে তখন ওই সকল জমির দখলদারগণ জমির প্রকৃত মালিককে বাদ রেখে নিজেদের নামে জমি রেকর্ড করিয়ে নেয়। এমনও হতে পারে জরিপকারদের ভুলের কারণে একজনের জমি অন্য জনের নামে রেকর্ড হয়ে যায়।

আবার দেখা যায় একজন মালিকের ১০০ শতক জমির মধ্যে ৯০ শতাংশ জমি রেকর্ড হয়েছে আর বাকী ১০ শতাংশ জমি ভুল বসত অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে।

তাই যখন জমি জমা জরিপের কাজ শুরু হয় তখন জমির মালিকের উচিত নিজে উপস্থিত থেকে কিংবা বিশ্বস্থ কোন প্রতিনিধির মাধ্যমে জরিপকারকদের সামনে জমির মূল কাগজপত্র হাজির করিয়ে রেকর্ডটি নিজের নামে করে নেয়া। 

জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায়

জরিপকারকরা জরিপ করার সাথে সাথে মালিককে একটি মাঠ পর্চার খসড়া দিয়ে যায়। তখন আপনার উচিত মাঠ পর্চাটি ভালো করে চেক করা। যদি সেখানে কোন প্রকার ভুল লক্ষ্য করেন যেমন- জমির পরিমাণ ৫০ শতক কিন্ত রেকর্ড হয়েছে ৩৫ শত। বাকি ১৫ শতক অন্যের নামে রেকর্ড হয়েছে। 

কিংবা একটি দাগ সম্পূর্ণই অন্যের নামে রেকর্ড হয়েছে, নামের বানান ভুল হতে পারে, দাগ নম্বর ভুল হতে ইত্যাদি। এ ধরণের কোন প্রকার ভুল পরিলক্ষিত হলে আপনি ৩০ দিনের মধ্যে সেটেলমেন্ট অফিসে আবেদন করে সেই ভুলগুলো সংশোধন করে নিতে পারবেন। 

যদি এমন হয় মাঠ পর্চা পাওয়ার পর ৩০ দিন পার হয়ে গিয়েছে কোন না কোন কারণে আপনি উক্ত সময়ে সেটেলমেন্ট অফিসে আবেদন করতে পারেন নি। আর এদিকে জরিপের প্রিন্ট পর্চা তৈরী হয়ে গিয়েছে। তাহলে কি করবেন?

জরিপের প্রিন্ট পর্চা তৈরী হয়ে যাওয়ার পর সেটেলমেন্ট অফিস থেকে আর রেকর্ড সংশোধন করা যাবে না। রেকর্ড সংশোধন করার জন্য আপনাকে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল এ মকদ্দমা করতে হবে। আর যদি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে মকদ্দমা করার সময় অতিক্রম হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে দেওয়ানী আদালতে সত্ত্বের মামলা করতে হবে। 

একজন বিজ্ঞ আইনজীবির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার রায় পাওয়ার পর সেই ডিগ্রির কপি নিয়ে পুনারায় সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে। সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা যদি দেখেন সবকিছু ঠিক আছে তাহলে তিনি আপনার জমির রেকর্ড সংশোধন করে দেবেন।

রেকর্ড সংশোধন মামলা করতে কি কি লাগে?

জমির রেকর্ড সংশোধন করতে বেশ কয়েকটা কাগজপত্র লাগে সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

  • জমির দলিল (দলিল মূলে জমির মালিক হলে)।
  • জমির বায়া দলিল (যার কাছ থেকে জমি কিনেছেন তার দলিল)।
  • রেকর্ড খতিয়ান (সি এস রেকর্ড থেকে শুরু করে যে রেকর্ডটি ভুল হয়েছে তার আগ পর্যন্ত সকল খতিয়ান)।
  • যে রকর্ডটি ভুল হয়েছে সেই রেকর্ডীয় খতিয়ান।
  • জমির খাজনা প্রদানের ডিসিআর/দাখিলা।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।

এই সকল কাগজপত্র দিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে মামলা করতে পারেন। যদি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল এ মামলা করার সময় অতিক্রম হয়ে থাকে তাহলে একজন বিজ্ঞ আইনজীবির মাধ্যমে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে। 

রেকর্ড সংশোধন করতে কতদিন লাগে?

অনেকেই জানেন যে, জমির রেকর্ড সংশোধন মামলা নিষ্পত্তি হতে বহু বছর লেগে যায়। তাই বলে কি মামলা করবেন না? আপনি যদি রেকর্ড সংশোধন করার জন্য মামলা না করেন তাহলে আপনার ভুল খতিয়ান ভুলই থেকে যাবে। 

পরবর্তীতে আবার যখন জরিপের কাজ আসবে তখন সেই ভুল ব্যক্তির নামেই আবার রেকর্ড হয়ে যাবে। কিংবা তিনি যদি কোন না কোন উপায়ে জমিটি নিজের নামে নামজারি করে নেন এবং জমির দখলে চলে যায় তাহলে তো রেকর্ড সংশোধনের মামলার সাথে সাথে সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের মামলা করতে হবে। তাই রেকর্ড ভুল হলে সেগুলো সংশোধন করা একান্ত প্রয়োজন, তাতে করে যত সময়ই লাগুক না কেন।

আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা অনেকইটাই ধীরগতির। কেন ধীরগতিতে মামলা চলে তার পেছনেও কিছু কারণ রয়েছে। যখন দেওয়ানী আদালতে বাদী কোন মামলা করে তখন বিবাদীরা সঠিক সময় আদালতে হাজির হয় না। টাইম প্রেয়ার দিয়ে সময় নিতেই থাকে আর বছরের পর বছর ঘুরাতে থাকে। এই কারণেই আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা ধীরগতীর হয়ে থাকে।

তাই বলে আপনি মামলা করবেন না এটা কিন্ত ঠিক না। আপনি জমির রেকর্ড সংশোধনের মামলা করে মামলাটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন, নির্দিষ্ট তারিখে সময়মত আদালতে উপস্থিত থাকেন। বিবাদী যতই আদালতে হাজির না হোক, দেখবেন এক সময় মামলার রায় আপনার পক্ষেই চলে আসবে। তবে এ ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ বছর সময় লেগে যেতে পারে। কখনো কখনো তার আগেই বাদীর পক্ষে রায় চলে আসে। 

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায় যে, জমি ভুলে অন্যের নামে রেকর্ড হলে কি করব এই চিন্তায় বসে না থেকে রেকর্ড সংশোধন করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ পূর্বক একজন বিজ্ঞ আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করে দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করুন। যত সময়ই লাগুক না কেন যদি আপনি জমির প্রকৃত মালিক হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মামলার ডিগ্রি পেয়ে যাবেন। 

জমির রেকর্ড সংশোধন কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে এটাই ছিলো বিস্তারিত তথ্য। এ বিষয়ে যদি আরো তথ্য জানতে চান তাহলে অবশ্যই একজন বিজ্ঞ আইনজীবির সহায়তা নিতে পারেন। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন